আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারী দাবিদার একটি গ্রুপের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই আজ রবিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১০ বছর পর নতুন নেতৃত্ব গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন। একটি অংশের বিরোধিতার কারণে এই সম্মেলনের পর হেফাজত ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীর ডাকেই মূলত আজকের এই প্রতিনিধি সম্মেলন বসতে যাচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ও সারা দেশের হেফাজত নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল শনিবার রাতেই আমন্ত্রিত অনেক নেতা হাটহাজারীর মাদরাসায় উপস্থিত হয়েছেন। সম্মেলনে শুরা কমিটির মতামতের ভিত্তিতে নতুন আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত হবেন বলে আয়োজকরা জানান।
এদিকে আজকের সম্মেলনকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়েছে আল্লামা শফী সমর্থক দাবিদার একটি পক্ষ। প্রতিনিধি সম্মেলনে সংগঠনটির মূলধারাকে বাদ দিয়ে চোরাপথে কমিটি গঠন করা হলে তা বাংলাদেশের আলেমসমাজ মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ওই পক্ষটি।
যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
তবে এসব হুমকি উপেক্ষা করে আজ যথারীতি হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, যাঁরা এই সম্মেলনের বিরোধিতা করছেন তাঁরা আগে থেকেই বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত। তাঁদের হুমকিতে কোনো কাজ হবে না। তাঁরা এ সম্মেলন থেকে বাদ পড়ায় নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করছেন।
এ ব্যাপারে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন, হেফাজতের সম্মেলন বানচাল করতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। আর এই কমিটি তৈরিতে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বা সখ্য নেই।’
হেফাজতের শীর্ষ একাধিক নেতা জানান, হেফাজতের নতুন আমির পদে বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীর আসা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে মহাসচিব হিসেবে এত দিন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নাম শোনা গেলেও শেষ মুহূর্তে তাতে ভাটা পড়েছে। দুদিন ধরে পদটি নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ করছেন শীর্ষ নেতারা।
এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল মাদরাসায় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন হেফাজত মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনটির হাল ধরেন মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। শিগগিরই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনেরও আশ্বাস দেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে নানা প্রক্রিয়া শেষে আজ রবিবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এ সম্মেলন বাস্তবায়নে কাজ চালায় জুনাইদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে গঠিত ১৮ সদস্যের একটি কমিটি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গড়ে তুলেছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। আর মহাসচিব করা হয় হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকে। ১৩ দফা দাবি দিয়ে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং পরে ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়ে ওঠে সংগঠনটি।