বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফরের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ) ফান্ডের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় না করে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ১৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্লিপ (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) সর্বমোট ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর মধ্যে ২ শত শিক্ষার্থী থাকা ১০৭ বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা, ৫ শত পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকা ২৯ বিদ্যালয়ে ৭০ হাজার টাকা এবং ৫ শত ওপরে শিক্ষার্থী থাকায় ১টি বিদ্যালয়কে ৮৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।
বরাদ্দ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধানশিক্ষকের যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করে সচেতনতামূলক ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবার নিয়ম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বগুড়ার শেরপুরের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই স্লিপ গাইডলাইন অনুসরণ করে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ হয়নি।
এছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের এসব আনুষঙ্গিক খরচ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ আয়কর (আইটি) কর্তন করার নিয়ম থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ভ্যাট ও আইটির কথা বলে ১৮ শতাংশ টাকা কাটা করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়গুলো প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ টাকা বঞ্চিত হয়েছে। এতে করে সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হলেও চাকুরির ভয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
অধিকাংশ বিদ্যালয়ে স্লিপ ওরিয়েন্টশন সভা, মা সমাবেশসহ প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ সম্পন্ন না হলেও কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে স্লিপের টাকা উত্তোলন ও ব্যয় দেখানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের এমএসসি, পিটিএ কমিটির সমন্বয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করার বিধান থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরিকল্পনা ছাড়াই কাগজে কলমে কাজ দেখিয়ে বরাদ্দ টাকা লোপাট হচ্ছে। বাধ্যতামূলকভাবে স্লিপ ফান্ডের টাকা থেকে বিদ্যালয়ের পথ নিদের্শক (ইন্ডিকেটর) বাবদ ২ হাজার টাকা ও বই রাখার আলমিরা বাবদ ৭ হাজার টাকা করে কেটে নিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
শেরপুর উপজেলার খানপুর নলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আমির হোসেন জানান, বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ভ্যাট বাদে গত বছর স্লিপের টাকা পেয়েছিলাম ৪৫ হাজার। এবার একই বরাদ্দে পাওয়া গেছে ৪১ হাজার টাকা। অফিস থেকে ১৮ শতাংশ ভ্যাট আয়কর কেটে নিয়েছে।
উপজেলার বিশ্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রাশেদুল ইসলাম জানান, এ বছর অতিরিক্ত হারে ভ্যাট আইটি কেটে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি জুম মিটিংয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছি। তারা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
একই এলাকার জামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক এসএম লুৎফর রহমান জানান, স্লিপের টাকা দিয়ে অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের পথ নিদের্শক (ইন্ডিকেটর) এখনো পাওয়া যায়নি। এগুলো শিক্ষা অফিস থেকে একযোগে সব বিদ্যালয়ে দেবে।
খন্দকারটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন জানান, এ বছর অতিরিক্ত হারে ভ্যাট-আইটি কেটে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু অফিস থেকে বলা হয়েছে, ভুলক্রমে অতিরিক্ত হারে টাকা কর্তন করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে।
শেরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল লতিফ জানান, ভুলক্রমে অতিরিক্ত হারে ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা সমন্বয় হতে পারে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মিনা পারভীন জানান, বিধি মোতাবেক স্লিপ ফান্ডের ভ্যাট ও আইটি কাটা হয়েছে। তাছাড়া সব বিদ্যালয় শতভাগ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া কোনো অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।