অনলাইন ডেস্কঃ
মাগুরার মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী সাকিবুল হাসান। জন্মের পর থেকেই একা একা চলাফেরা করতে পারে না সে। কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। তবে তার এই শারীরিক অক্ষমা মেধার বিকাশকে আটকে রাখতে পারেনি। অসম্ভব মেধাবী সে।
পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ ৫ পাওয়া এই মেধাবী ছাত্র একখানা হুইল চেয়ারের অভাবে এখন বিদ্যালয় যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল। করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বর্তমানে বাড়িতেই বিষন্নতায় দিন কাটাচ্ছে সে।
করোনার পর বিদ্যালয় খুললে কীভাবে সহাপাঠীদের সঙ্গে ক্লাসে যোগদান করবে – তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না এই মেধাবী ছাত্রের।
একখানা হুইল চেয়ারই দিতে পারে এর সমাধান। কিন্তু ১৩ বছর হয়ে গেল হুইল চেয়ার ‘সোনার হরিণের’ মতো দুষ্প্রাপ্য হয়ে আছে এখনো।
অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও একটি হুইল চেয়ার জোটেনি তার ভাগ্যে।
যে কারণে পড়াশোনা আর আগাবে কি না সে ভাবনায় ঘরে সারাদিনই মনমরা হয়ে থাকে সাকিবুল হাসান।
ছেলের এমন পরিস্থিতি দেখে বাবা-মায়েরও বেদনার শেষ নেই।
তাদের সাধ্যি নেই ছেলের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করার। কারণ, সাকিবুলের বাবা শাহাজাহান মৃধাও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান তিনি। পঙ্গত্ব নিয়ে পুরাতন কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে কোনোমতে দু-বেলা খাবারের অর্থ যোগান তিনি।
সামান্য আয় দিয়ে ছেলেকে চলাফেরার সহায়ক উপকরণ কিনে দিতে পারছেন না শাহাজাহান মৃধা।
এ বিষয়ে সাকিবুলের মা হোসনে আরা যুগান্তরকে বলেন, সাকিবুল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণিতে সে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। তার বড় সমস্যা সে হাটতে পারে না। একা একা স্কুলে যেতে পারে না। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে অনেক বড় চিকিৎসকের কাছে নিয়েছি। তারপরও তাকে ভালো করতে পারিনি। এখন একটি হুইল চেয়ার হলে সব সমস্যা মিটে যেত আমাদের।
সাকিবুলের বাবা শাহাজাহান মৃধা বলেন, আমার পা নেই। জমিজমাও নেই। দর্জির কাজ করে কিছু টাকা আয় করি। তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ঠ হয়। আয় না করলে খাবার জোটে না। পা না থাকলেও মাঝে মধ্যে সাকিবুলকে স্কুলে দিয়ে আসি। সব সময় পারি না। আমার তেমন আয় নেই যে তারে একটা হুইল চেয়ার কিনে দেব। একটি হুইল চেয়ার থাকলে সে সে একাই স্কুলে যেতে পারত। ছেলেকে এভাবে দেখতে খুব কষ্ট লাগে। একটি হুইল চেয়ারের জন্য সমাজের বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।
সাকিবুল জানায়, হাঁটতে পারি না বলে সহপাঠিদের ওপর নির্ভর করেই এতোদিন পড়ালেখা চালিয়ে এসেছি। তাদের অনেক কষ্ট দেই আমি। একটা হুইল চেয়ার পেলে সহপাঠিদের কষ্ট দিতাম না।
বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, সাকিবুল হাসান মেধাবী ছাত্র। সে হুইল চেয়ার পেলে সামনে স্কুল চালু হলে একা একাই স্কুলে আসতে পারবে।
এ বিষয়ে বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: পান্নু মোল্যার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী জায়নুর রহমান জানান, আগামীতে হুইল চেয়ারের বরাদ্দ আসলে তাকে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, প্রতিবন্ধী ওই ছাত্রকে একটি হুইল চেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।