৬শ বারের বেশি আদালতে গেছে সাংবাদিক কাজী শাহেদ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয় নিয়ে পথ চলতে গিয়ে প্রকাশক, প্রধান সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতা।
আশির দশকের শেষ দিকে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের পথ ধরেই বাংলাদেশের সংবাদপত্রের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। কাজী শাহেদ আহমেদের হাত ধরে ১৯৯১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাজী শাহেদ আহমেদের সম্পাদনায় বাজারে আসে দৈনিক আজকের কাগজ। এটি কেবল একটি পত্রিকাই ছিল না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের দর্শনের ভিত্তিতে মূলত একটি বিপ্লব ঘটায়। পত্রিকাটি প্রকাশনার মধ্য দিয়ে আধুনিক সংবাদপত্রের প্রচলন শুরু হয় বাংলাদেশে। এই পত্রিকা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানাবিধ ইতিহাস। আজকের কাগজের প্রকাশনাকে কেন্দ্র করেই দৈনিক পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসনে স্থানান্তর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যায়ে পথ চলতে গিয়ে প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতা। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের পাশাপাশি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে ৬শ বারের বেশি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। তবু অবিচল থেকে একঝাঁক তরুণ সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ করে গেছেন পত্রিকার প্রকাশনা। মাত্র কয়েক দিনেই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে।
পত্রিকা প্রকাশের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজী শাহেদ লেখেন, আজকের কাগজকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক মামলা-মোকদ্দমার। সম্পাদক হওয়ায় আমাকে ৬শ দিনের বেশি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। হাজত ভোগ করতে হয়েছে। এছাড়া নানা হুলিয়া আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তো ছিলই। মামলা হয়েছে ৮৭টা।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে দেশের গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা প্রায় অনুপস্থিত ছিল। মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই আজকের কাগজকে এগিয়ে নেন একাত্তরের যুদ্ধবন্দি, শহীদের ভাই কাজী শাহেদ আহমেদ।
নিজের আত্মজীবনীতে তিনি এ প্রসঙ্গে লেখেন, “আজকের কাগজ ছিল মূলত একটা আন্দোলন, একটা বিপ্লব। আজকের কাগজের দর্শন ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আর লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গণমানুষের মনে বিকশিত করার এই প্রত্যয়ী অভিযান থেকে সরকারের বিরোধিতাও টলাতে পারেনি কাজী শাহেদ আহমেদকে। সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সরকারের সময়ও তাকে সরকারি বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রভাবশালী মন্ত্রীরা ডেকে দিয়েছেন হুমকি। হয়েছেন আটক।
১৯৯২ সালের মার্চে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে আর্থিক সহযোগিতা ও পত্রিকার মাধ্যমে সমর্থন জানানোর কারণে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী (প্রয়াত) ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আজকের কাগজে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাধাবিপত্তি আর প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দৈনিক আজকের কাগজ পেশাগত সাফল্য পেয়েছে। লাভ করেছে পাঠকপ্রিয়তা।
গত সোমবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় কাজী শাহেদ আহমেদের মৃত্যুবরন করেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও আধুনিক ধারার পথপ্রদর্শক হিসেবে আজকের কাগজের প্রকাশনা স্থগিত হয় ২০০৭ সালে।