DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাবুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

রংপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গড়ে উঠেছে ফলের হাট

Doinik Astha
জুলাই ১৬, ২০২২ ১০:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রিয়াজুল হক সাগর রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ রংপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গড়ে উঠেছে ফলের হাট। বাঁশের খুঁটিতে প্লাস্টিকের ত্রিপল টাঙিয়ে ছায়াঘেরা পরিবেশে চেয়ার-টেবিল আর চৌকিতে ফলের পরসা সাজিয়ে চলছে জমজমাট ব্যবসা।

প্রতিদিন ভোর থেকেই শহীদ বেদির কোলঘেষে শুরু হয় পাইকারদের হাঁকডাক। ফল বোঝাই ট্রাক, ভ্যানসহ অন্যান্য পরিবহনে লোড-আনলোড মুখর থাকছেন ফল ব্যবসায়ীরা। এতে বেশিরভাগ সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে থাকছে নোংরা পরিবেশ। যেন শহীদ মিনার চত্বর এখন ফলের আড়ত। শনিবার (১৬ জুলাই) সকালে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে যায়, প্রায় ১০-১২টি ফলের দোকান দেখা যায়। শহীদ মিনারের কোলঘেষে অনেক দোকানি ফলের ক্যারেটসহ ময়লা আবর্জনা রেখেছে। অনেকে আবার জুতো পায়ে দিয়ে শহীদ মিনারে বসে আছে। সেখানে আনারস, পেয়ারা, লটকোন, জাম্বুরা, ড্রাগনসহ হরেক রকম ফলের ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সরব উপস্থিতি।

কেউ ব্যস্ত ফলের পরসা সাজাতে, কেউবা ব্যস্ত বিক্রিতে। আবার কেউ কেউ দূর-দূরান্ত থেকে আসা ফলের গাড়ি আনলোড করছে। হঠাৎ করে দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি মহান ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার চত্বর। অথচ শহীদ মিনারের পাশেই রংপুর সিটি করপোরেশন ঘেষে রয়েছে বৃহৎ সিটি বাজার। পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ ও টাউন হল চত্বরজুড়ে থাকা বিভিন্ন সাহিত্য-সাস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনগুলোর অভিযোগ, হঠাৎ করেই শহীদ মিনার চত্বরকে ফলের বাজারে পরিণত করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে শহীদ মিনার চত্বরে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ফলের দোকান গড়ে তুলেছে।

এতে ভাষা শহীদদের মর্যাদা ও তাদের আত্মত্যাগের সম্মানে নির্মিত শহীদ মিনার চত্বরের পবিত্রতা ও সৌন্দর্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কারো কোনও নজরদারি নেই। রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক ও সাহিত্যকর্মী সুলতান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, রংপুর শহীদ মিনার চত্বর একটি ঐতিহাসিক চত্বর। অথচ এ জায়গাটা এখন রংপুর শহরের সবচেয়ে নোংরা ময়লাযুক্ত জায়গা। আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি বানিয়ে সেটির পানি নিষ্কাশনের ড্রেন আর রাস্তা অপরিকল্পিত ভাবে উন্নয়ন করায়- টাউন হল এবং শহীদ মিনার চত্বর এখন একটু বৃষ্টিতেই ডুবে যায়। এর মধ্যে আবার শহীদ মিনার ঘেষে ফলের হাট বসানো হয়েছে। যেন এসব কেউ দেখার নাই। সংবাদ ও সাহিত্যকর্মী রেজাউল করিম জীবন বলেন, দিনেদিনে মানুষে দেশাত্ববোধ, দেশপ্রেম কেমন জানি গুলিয়ে ফেলছে। আগে এমন ছিল না!

আমাদের শহীদ মিনার চত্বর এখন ফলের হাট। বহুবার জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা লোকজনকে হাটটি সরিয়ে নিতে আমরা অনুরোধ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এটা ভীষণ খারাপ লাগার বিষয়টি। রংপুরে এতো জায়গা থাকতে কেন শহীদ মিনার চত্বরে ফলের হাট বসাতে হবে, এটা আমাদের বোধগম্য নয়। রংপুরের সাবেক ছাত্রনেতা ও ইতিহাস সংরক্ষক রিয়াদ আনোয়ার শুভ বলেন, শহরে এত জায়গা থাকতে শহীদ মিনার চত্বরেই কেন ফলের হাট বসাতে হবে? সিটি করপোরেশন ক্যাম্পাসের ভিতরেই তো বসাতে পারে। জায়গা সেখানেও আছে।

আরো পড়ুন :  বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত

সিভিল সার্জনের বাসভবনের সামনে এর চেয়ে দ্বিগুণ হাট বসানো সম্ভব। বসানো সম্ভব রংপুর সরকারি কলেজের রাস্তা বা সুরভি উদ্যানের সামনের রাস্তায়। সেই সব স্থানে না করে এখানেই কেন করতে হবে? রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিভিন্ন সময়ে মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। এখন আবার হাট-বাজারও বসানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শহীদ মিনারের সামনে আগে সবুজ ঘাস ছিল। মানুষ সেখানে বসে জনসভার বক্তব্য শুনতো। আর এখন? বৃষ্টিতে হয় কাঁদা, বৃষ্টি না হলে ধুলা। শুধু ফলের হাট-বাজার নয়, পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে সব ধরণের মেলার আয়োজনও বন্ধ করা উচিত। এখানে সেই সব মেলাই হওয়া উচিত, যেসবের সাথে সাহিত্য-শিক্ষা-সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এখানকার পরিবেশটা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বান্ধব হওয়া উচিত। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টা ভেবে দেখার আহবান জানান তিনি।

এদিকে ফল ব্যবসায়ী ও পাইকারদের দাবি, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে করোনাকালীন সময় থেকে তারা সীমিত পরিসরে ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ফলের গাড়ি লোড-আনলোডসহ বিকিকিনি হয়ে থাকে। পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে শহীদ মিনার চত্বর ঘেষে এই ফলের হাটের জন্য তারা টাউন হল চত্বরের কয়েকজনকে বখরাও দিয়ে থাকেন। সেখানকার আনারস ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া দাবি করেন, পেটের দায়ে আমরা ব্যবসা করছি। তাদের কয়েক ঘণ্টার ফলের ব্যবসার কারণে শহীদ মিনারের পরিবেশ নষ্ট হয়নি। তারা সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলেন না। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই ব্যবসা করে আসছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনও বাধা দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, করোনা মহামারির শুরুর দিকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ মানবিক দিক বিবেচনা করে সেখানে অস্থায়ীভাবে বাজার বসাতে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর সেখান থেকে অন্য ব্যবসায়ী চলে গেছে। এখন যেসব ফল ব্যবসায়ী আছে, তারা যদি নিজ দায়িত্ব সেখান থেকে অন্যত্রে না যায়। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। এনিয়ে প্রয়োজনের আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবো। অন্যদিকে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ফিরুজুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনার চত্বরে হাট বসানোর জন্য কাউকে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। সেখানে যারা ফলের ব্যবসা করছেন, তাদেরকে সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের সাথে কথা বলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০