অল রাউন্ডার কথা টা শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি, সনাথ জয়সুরিয়া, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ,শহীদ আফ্রিদি আমাদের সাকিব আল হাসান আবার বর্তমান সময়ের বেন স্টোকসের নাম। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় “সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার কে?”
তবে ওই জায়গায় এখানের কেউই থাকবে না, থাকবে একজনের নাম উনি জ্যাক হেনরি ক্যালিস!
ক্যালিসের স্ট্যাট দেখলেই যে কারও কপালে চোখ উঠে যাওয়ার মত অবস্থা হবে। টেস্ট ওডিয়াই তে একমাত্র ক্রিকেটার যার ১০,০০০+ রান এবং ২৫০+ উইকেট! যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত কেউই নেই তার সাথে। শুরুটা ছিল ১৯৯৫ আর শেষটা ২০১৩। এই ১৯ বছরে এরকম অর্জন!
একবার ক্যালিসের টেস্ট স্ট্যাট দেখাতে গিয়ে তুলনা করা হয়েছিল ভারতের ব্যাটিং এবং বোলিং কান্ডারি শচীন টেন্ডুলকার ও জহির খান কে দিয়ে।
তার বোলিং এভারেজ এবং উইকেটের সংখ্যা ছিল প্রায় জহির খানের সমান এবং তার ব্যাটিং এভারেজ ছিল শচীন টেন্ডুলকারের সমান।
অর্থাৎ জ্যাক ক্যালিস থাকার মানে ছিল একসাথে একজন ব্যাটসম্যান ও বোলার নিয়ে খেলা।
দিও ক্যারিয়ার শেষে তার এভারেজ শচীনের চেয়ে বেশিই ছিল।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রান আর উইকেটের ফোয়ারা ছোটানো তে স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় দলে ডাক পায় তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী শুরুটা তত ভালো ছিল না। ব্যাট হাতে প্রথমে কিছু ম্যাচ নিষ্প্রভ ছিল। তবুও ১৯৯৬ বিশ্বকাপে দলের অংশ হিসেবেই ছিল। তবে একাদশে থাকা কিংবা দলে নিয়মিত ছিল না। তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট আসতে শুরু করে ১৯৯৭ সালে। সেবার সে ওডিয়াই তে পাকিস্তানের সাথে ৬১ রান করে। একই বছরে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের ঘরের মাঠেই সেঞ্চুরি করে টেস্ট ম্যাচ বাচায়। এখান থেকেই তার দলে নিয়মিত হওয়া শুরু হয়।
পরের বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ২ টি ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ট্রফি জিতে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট জিতে জ্যাক ক্যালিস। যা এখনও তাদের একমাত্র কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সেবার ফাইনালে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি।
তার ব্যাটিং এর অবিশ্বাস্য প্রদর্শনী শুরু হয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে। সেবার তার টেস্ট ব্যাটিং এভারেজ ছিল ৬৯ এবং ওডিয়াই তে ৪১! টেস্টে বোলিং এভারেজ ২৫ আর ওডিয়াই তে ২৬!
এখান থেকে তার ব্যাটিং এবং বোলিং এ ধারাবাহিকতার শুরু যা পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে সবসময়ই ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচ সেরা পুরষ্কারও তার নামেই রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিয়নের তালিকায় ৫ নাম্বারে রয়েছে তিনি।
২০০৭ সালে আইসিসি টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার ও ২০০৫ সালে আইসিসি ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার পুরষ্কার জিতেন তিনি।
একজন অল রাউন্ডার হওয়ার সুবিধা এখানেই।
ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারলে বল হাতে ভালো করার সুযোগ থাকে, যার কারনে ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম দিকে সেট হতে একটু সময় লাগলেও আর কখনওই পারফর্মেন্সের জন্য দল থেকে বাদ পরা লাগেনি, এমনি অফ ফর্মেও থাকেনি তিনি। কখনও ব্যাট হাতে কিংবা কখনও বল হাতে আবার কখনও একসাথে দুটো করে দল কে ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি।
সব ফরম্যাট মিলে ৫৭ টি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার জিতেছেন যা ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছে ২৩ বার!
ব্যাটিং, বোলিং,ফিল্ডিং সব কিছুতেই তিনি ছিলেন অনন্য। সবসময়ই দলের জন্য নিজের সেরাটা দিয়েছেন। ক্যারিয়ার শেষে তাই নিজেকে নিয়ে গেছে অনন্য পর্যায়ে।
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান, বোলার, পেসার, স্পিনার নিয়ে তর্ক থাকলেও সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার নিয়ে তার ক্যারিয়ারের পর আর কখনওই ছিল না। নিঃসন্দেহে তিনি হলেন সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার।
আজকে এই ক্রিকেট লিজেন্ডের জন্মদিন, শুভ জন্মদিন জ্যাক হেনরি ক্যালিস।
১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সে মোট ১৬৬ টেস্ট, ৩২৮ ওডিয়াই ও ১৭ টা টিটুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
টেস্টে ১৩২৮৯ রান ও ২৯২ উইকেট আর ওডিয়াই তে ১১৫৭৯ রান ও ২৭৩ উইকেট সংগ্রহ করেছেন তিনি।