ফুটবলে ১ বছর আগেও প্রায় অপরিচিত নাম ছিল হান্স ফ্লিকের।গত নভেম্বরে দায়িত্ব পাওয়ার পরে ৩৯ ম্যাচে ৩৬ জয়,৪ শিরোপা ।অর্থাৎ প্রতি ১০ ম্যাচেরও কম লেগেছে একটি করে শিরোপা জয়ের জন্য। ২ পরাজয় এবং ১ ড্র। অর্থাৎ তার শিরোপার সংখ্যা ড্র এবং হারের চেয়েও বেশি।
ফুটবলার হিসেবে তেমন সফল ছিলেন না। মিডফিল্ডার হিসেবে ছিল ক্যারিয়ার। সিনিয়র ক্যারিয়ারে ম্যাচ খেলেছিল ২০০ থেকেও কম।ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে ভিক্টোরিয়া বামেন্টালের হয়ে।১৯৯৬-২০০০ পর্যন্ত সেখানে কোচিং করায়। এখানে তার শিরোপার সংখ্যা ছিল শুন্যে।
বামেন্টালে ক্যারিয়ার শেষ করার পর টিএসজি ১৮৯৯ হফেনহেইমে কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়। এখানে ৫ বছরে শুধু একটা ঘরোয়া শিরোপা জয় করে।
এখান থেকে ছাটাই হওয়ার পর অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হিসেবে রেড বুল সালসবার্গে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং সেখানে মাত্র ১ বছর ছিলেন তিনি।
গোল্ডেন বয়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশিত
এখানে এক বছর ক্যারিয়ার শেষ করে জার্মানির জাতীয় দলের অ্যাসিস্ট্যান্টের পদে জোকিয়াম লোর সাথে কাজ করে। সেখানে ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এখানে একই পদে ছিল।এরপর ৫ বছর সে ফুটবলে কোন জায়গায় যুক্ত না থাকলেও শেষে ২০১৯ সালে বায়ার্নে সহকারী হিসেবে যুক্ত হয়।
ফ্লিকের বায়ার্নের কোচ হওয়ার গল্প –
বুন্দেসলীগা মানেই যেন বায়ার্ন মিউনিখ। ২০১১-১২ সিজনের পর থেকে সব শিরোপাই বাভারিয়ানদের ঘরে। এর আগে শেষবার যখন চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছিল তখন ২০১৩ সাল।
এরপর মধ্যে ৬ বছর পার হয়ে গেলেও দেখা মিলে নি কোন চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা।ঘরোয়া সাফল্য যখন তাদের জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী তখন তাদের স্বপ্ন ছিল শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লীগ কে ঘিরে।
গত মৌসুম যখন শুরু হয় তখন দলের দায়িত্ব ছিল নিকো কোভাচের হাতে। বুন্দেসলীগায় ভালো করা দল টা সিজনের শুরু থেকেই খাবি খাচ্ছিলো। ড্র দিয়ে শুরু করার পর টানা ২ ম্যাচ জিতলেও আবার ড্র করে। লীগের প্রথম ৯ ম্যাচ শেষে ৫ জয়,৩ ড্র, ১ পরাজয়ে টেবিলের ২ নাম্বারে ছিল।
৯ ম্যাচ শেষে এরকম পারফর্ম খারাপ না হলেও দলের নাম যখন বায়ার্ন মিউনিখ তখন এরকম পারফর্মেন্সে মোটেও খুশি নয় সমর্থকরা। ফলাফল যেমন ছিল বাজে তেমনি খেলায়ও ছিল না কোন সৌন্দর্য।
বায়ার্নের ঘরের আইকন থমাস মুলারের পারফর্মেন্সও ছিল বাজে। নিকো কোভাচ চাচ্ছিলো তাকে বিক্রি করে দিতে। দলের মধ্যে ছিল যাচ্ছেতাই অবস্থা।ম্যাচ ডে ১০ নাম্বারে তাদের খেলা ছিল ফ্রাংকফুর্টের সাথে।
অ্যাওয়ে ম্যাচে আতিথ্য নেয় বাভারিয়ানরা।
কোন সন্দেহ ছাড়াই এটা ছিল গত সিজনে তাদের সবচেয়ে খারাপ ম্যাচ। ম্যাচে ৫-১ গোলের লজ্জাজনক পরাজয়ে পয়েন্ট টেবিলের ২ নাম্বার থেকে ৪ নাম্বারে চলে যায় তারা।
পরেরদিনই তারা কোচ কে ছাটাই করে দায়িত্ব তুলে দেয় সহকারী কোচ হান্স ফ্লিকের হাতে। প্রথম ২ ম্যাচে ২ জয়ে ৩ নাম্বারে উঠে এলেও আবার টানা ২ পরাজয়ে ৭ নাম্বারে চলে যায় তারা।
ব্যস, এখানেই বায়ার্নের দুর্দিনের শেষ। এরপর টানা ৬ ম্যাচ জিতে টেবিলের শীর্ষে চলে আসে। লীগের ২১ নাম্বার ম্যাচ ড্র করার পর শেষ ১৩ ম্যাচে ১৩ জয়ে শিরোপা ঘরে তোলে তারা। লীগ শিরোপা এবং ডিবিএফ পোকাল জিতে ঘরোয়া ডাবল জয় করে ফ্লিক বাহিনী।
এবার শুধু ঘরোয়া ডাবল জিতেই থেমে থাকে নি ফ্লিকের দল।চ্যাম্পিয়নস লীগেও ঝড় তুলেছে বাভারিয়ানরা।গ্রুপ পর্বের সব কয়টা ম্যাচেই জয়। এরপর নক আউটে প্রথমে চেলসি কে ২ লেগে নাস্তানাবুদ, কোয়ার্টারে বার্সাকে ৮-২ গোলে হারিয়ে রীতিমতো সবাই কে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তার দল।
ফাইনালে পিএসজিকে তাদেরই একাডেমীতে বেড়ে ওঠা ফুটবলার কিংসলে কোম্যানের করা একমাত্র গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপাও ঘরে তোলে তারা।
ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লীগে প্রতিটি ম্যাচ (১১ ম্যাচ) জয়ের বিরল রেকর্ডও গড়ে তোলে ফ্লিক বাহিনী। হঠাৎ করে সিজনের শুরু থেকে খাবি খাওয়া দল থেকে সিজন শেষে ট্রেবল ঘরে তোলা! বদলে যাওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান অবশ্যই হান্স ফ্লিকের।
নয়্যারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা, থমাস মুলারের অফ ফর্ম, ডিফেন্স, মিডে সব কিছু ছন্নছাড়া থেকে চিরাচরিত ম্যানুয়েল নয়্যার,অসাধারণ ডিফেন্স, মিডে থিয়াগো, গোয়েৎজকাকে অনবদ্য করে তোলা, লেভান্ডোস্কিকে দিয়ে গোল কে ডালভাতে পরিণত করা, থমাস মুলার কে দিয়ে সিজনে সর্বোচ্চ এসসিস্ট করানো, গ্যানাব্রি কে রাতারাতি তারকায় পরিণত করা, সব কিছুর জন্য হান্স ফ্লিক কে ক্রেডিট না দিলে খুব বড় অন্যায়ই হয়ে যাবে।