যেখানে তামিম খেলেছে ২০৭ টি ম্যাচ সেখানে ইমরুল খেলেছে মাত্র ৭৮ টি ম্যাচ। নিয়মিত রান করতে পারেন নি বলেই সবসময় ছিলেন দলে আসা যাওয়ার মধ্যে। এরকমও হয়েছে যে সে দলে ডাক পেত শুধু কারও ইঞ্জুরির জন্য। ২০১১ বিশ্বকাপে প্রথমে দলে ছিল না, পরে ডাক পেয়েছিল একজনের ইঞ্জুরিতে। ২০১৫ বিশ্বকাপেও প্রথমে ডাক পায়নি দলে, পরে এনামুল হক বিজয়ের ইঞ্জুরিতে ডাক পেয়েছিল আবার।
২০১৯ বিশ্বকাপে অবশ্য এরকম কিছু হয়নি, তাই হয়ত বিশ্বকাপ দলেও জায়গা হয়নি।
এরকম কারও ইঞ্জুরিতে ডাক পাওয়া নিয়ে একবার সে জানিয়ে ছিল যে তার বাড়িয়ে সবসময় একটা আলাদা ব্যাগ গুছিয়ে রাখা থাকে, এই বুঝি কারও ইঞ্জুরিতে তার ডাক এলো।
এ তো গেল শুধু ইমরুলের কথা। দলে ইমরুল ছাড়া আরও অনেক ওপেনার ওইপাশ এসেছে আর দল থেকে বিদায় নিয়েছে। তামিম যেন অপর প্রান্তে উইকেট পতনের মত তার পার্টনারদের পরিবর্তনই দেখেছিলেন। অনেকেই আসে আশার আলো নিয়ে কিন্তু কেউই থিতু হতে পারেনি এই পজিশনে।
তামিমের আগে অভিষেক হয়েছিল আরেক ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকির। ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ডের সাথে অভিষেক হলেও তিনি জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছে মাত্র ৫৪ ম্যাচ,যা ইমরুল কায়েসের চেয়েও কম। থিতু হতে পারেনি তিনিও।
এনামুল হক বিজয়ের শুরুটাও যেন ভালো ছিল। ২০১২ সালে অভিষেক সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সেঞ্চুরি করে যেন সেটাই বলেছিল সে।
২০১৪ এশিয়া কাপে গড় ছিল ৫৬!
মনে হচ্ছিল তামিমের যোগ্য পার্টনার পাওয়া গেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেও পারেনি জায়গা ধরে রাখতে।
অবশ্য তার পিছনে তার স্লো ইনিংস আর ইঞ্জুরি অন্যতম কারন ছিল। বিশ্বকাপের ইঞ্জুরির পর আর দলে এসে জায়গা করতে পারেনি তিনি।
সুপার ওভারে কোলকাতার জয়
এর মধ্যে শামসুর রহমান শুভ শুধু এসে চলেই গিয়েছেন, টিটুয়েন্টি তে একটু ভালো করলেও তারও একই দশা ছিল।
২০১৫ বিশ্বকাপে তামিমের সঙ্গী ছিল সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করে, পাকিস্তান, ভারত আফ্রিকার বিরুদ্ধে একই বছর পারফর্মের পর সবাই ধরেই নিয়েছিল বাংলাদেশ তামিমের সঙ্গী পেয়েছে। অসাধারণ সব শট, স্ট্রাইক রেট ঠিক রেখে রান করা সবই যেন দৃষ্টিনন্দন ছিল। ভাগ্যে আবার তারও একই জিনিস ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত বাজে ফর্মে সেও জায়গা হারিয়েছে। তিনি অবশ্য এখনও দল থেকে জায়গা হারান নি, তবে হারিয়েছে তার পছন্দের ওপেনিং পজিশন।
এরপর এসেছে হালের লিটন কুমার দাস:
২০১৫ সালে অভিষেধ টেস্টে ভারতের সাথে ৪৪ রান করা ইনিংসের পর ধোনি বলেছিল লিটন হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত, বোর্ডের উচিত তার যত্ন নেয়া। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রানের ফোয়ারা ছোটানো লিটন প্রথমে জাতীয় দলে নিয়মিত হতেই পারছিলেন না। ৩ বছর পর এশিয়া কাপে এসে ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে সেঞ্চুরি ছিল যেন তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এক সময় ১৮০ এর উপরে টার্গেট দেখলে যেই বাংলাদেশ আগেই হেরে যেত সেটা লিটনের ব্যাটিং দেখলে মনে হয় এখন দলের পরিবর্তন এসেছে। শ্রীলংকার সাথে রেকর্ড ২১৩ রানের টার্গেট চেস করতে গিয়ে ১৯ বলে করেছিলেন ৪৩ রান। উড়ন্ত সূচনা এসেছিল তার ব্যাটে যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন।
এরপরও যেন সব ঠিকমত হচ্ছিল না তার জন্য।
তাই তো ২০১৯ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেলেও প্রথমে একাদশে ছিলেন না তিনি। প্রথমে কিছু ম্যাচে দলে জায়গা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচে একাদশে জায়গা পান তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ কে ৩২২ রানের বিশাল টার্গেট দেয়। ১৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন বাংলাদেশ পরাজয়ের চিন্তায় ছিল তখন পিচে আসেন লিটন। সাকিব আল হাসানের সাথে সেদিন বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ডে ১৮৯ রানের পার্টনারশিপ করে দল কে সহজ জয় এনে দিতে সাহায্য করে লিটন। ৮.৩ ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় বাংলাদেশ।
১২৪ করে ম্যাচ সেরা হন সাকিব এবং তাকে সমান ভাবে সাপোর্ট দিয়ে যান লিটন। ৯৪ রান করে অপরাজিত থাকেন সে। বিশ্বকাপে এরকম একটা জয় বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয়ই বটে।
২০১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ বাদ পরে যায় তবে লিটনের জন্য বিশ্বকাপ টা ভালো ছিল বলা চলে। তার ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩০ ছুঁইছুঁই সেখানে ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষ করে ৪৬ গড় নিয়ে।
২০২০ সালের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে লিটন তার ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস এবং বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। একই ম্যাচে তামিম ইকবালের সাথে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানও করেন। সিরিজে ২ টা সেঞ্চুরি, ১৭৬ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস এবং একই ম্যাচে তামিমের সাথে ২৯২ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ করেন নি।
ক্যারিয়ার জুড়ে বেশিরভাগ সময়েই তার ব্যাট ধারাবাহিকতা দেখতে পায় নি, তাই সমালোচনাই ছিল তার নিয়তি। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে সবসময়ই ছিলেন অসাধারণ। তার ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ড আমাদের দলের প্রধান কাণ্ডারি সাকিব,তামিম,মুশফিক,মাহমুদুল্লাহর চেয়েও ভালো। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের অসাধারণ খেলা এবং ধারাবাহিকতা টেনে আনতে পারেনি জাতীয় দলে, তাই দুয়োধ্বনিই ছিল তার ভাগ্য। তবে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে তার ভাগ্যে।
দলে নিজের জায়গা পোক্ত করলেও এখন প্রেসিডেন্ট কাপে আবারও ব্যাটে রান হারিয়েছে তিনি। তেমন রান করতে পারেনি ওপেনার তামিম, সৌম্য, কায়েসও। এর বাইরে যারা আছে তারাও তেমন ভালো করতে পারছে না।
এখন পর্যন্ত তাদের সবার পারফর্মেন্স:-
লিটন:- ১১,০,২৭
নাইম:- ৯,০
কায়েস:- ৪০,০,৪
সাইফ:- ১৭,৭
সৌম্য:- ২১,৯,৮
তামিম:- ২,৩৩
তানজিদ:- ২৭,৮
এখন প্রশ্ন হলো দলে একজন ওপেনার তামিম, আরেকজন ওপেনার কে হবেন জাত