রাজধানীর পাইকারি বাজার থেকে আবারো আলু প্রায় উধাও। বিক্রি হচ্ছে না সরকারের বেঁধে দেয়া দামে। আড়তদাররা বলছেন, হিমাগার থেকে নির্ধারিত দামে আলু পাচ্ছেন না তারা। এদিকে সরবরাহ বাড়ায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমে এলেও দেশি পেঁয়াজের বাজার এখনো চড়া। সোমবার (০২ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের আড়তদাররা খুচরা ৩৫ আর পাইকারি ৩০ টাকা বিক্রির কথা বললেও ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘আমি ৪৫ টাকা করে প্রতি কেজি আলু ক্রয় করেছি।
আরও পড়ুন: আজ অনুমোদন পাচ্ছে ২০২১ সালের সরকারি ছুটি
কৃষি বিপণন অধিদফতর গত ৭ অক্টোবর প্রতি কেজি আলু (কোল্ডস্টোরেজ) ২৩ টাকা, পাইকারি ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু এ দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। পরে গত ২০ অক্টোবরের আলুর দাম পুনরায় নির্ধারণ করা হয়। এদিন প্রতিকেজি আলু (কোল্ডস্টোরেজ) ২৭ টাকা, পাইকারি ৩০ টাকা এবং খুচরা ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে, পেঁয়াজ ও আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে করে বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫ টাকা কেজি আলু আর ৩০ টাকা কেজিদরে পেঁয়াজ বিক্রি চালু রেখেছে।
অপর একজন বিক্রেতা বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে। কারণ আমরা এই দামে কিনতে পারছি না। তাহলে বিক্রি করব কীভাবে।
অন্যদিকে, ৬৪ জেলা থেকে হিমাগারে কি পরিমাণ বীজ আলু ও খাবার আলু রাখা আছে তার হিসাব এখনো পায়নি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। তাই আলু নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে কোনো সুপারিশ করতে পারছে না এ কমিশন। দেশের হিমাগারগুলোতে আলুর পরিমাণ সম্পর্কে জানতে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক বা ডিসি বরাবর চিঠি পাঠায় এ কমিশন। তবে মাত্র ১২টি জেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি ৫২ জেলা থেকে কোনও তথ্য জানানো হয়নি বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও, ৫৫ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব নয়
কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় অন্তত ৭৭ লাখ টন। গত মৌসুমে প্রায় এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়। এই হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩১ লাখ ৯১ হাজার টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিছু পরিমাণ আলু রফতানি হয়।
অপর দিকে, গতকাল ১ নভেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিন দিন আগ থেকে দেশে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। চাহিদার তুলনায় ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি হয়। এবার ভারতের সংকটের কারণে বাংলাদেশও ঘাটতির মধ্যে পড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। সংকট সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সহযোগিতায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। তিন দিন আগে দেশে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মুনাফা, আমদানিকারকদের কমিশনসহ সব খরচ যোগ করে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ভোক্তা পর্যায়ে কোনও অবস্থায় ৫৫ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
অপর এক অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ৩ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বাড়ানো হবে। সে জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’
মাস দু-এক আগে ভারতের রফতানি বন্ধের ঘোষণায় অস্থির হয়ে যাওয়া পেঁয়াজের বাজার এখনো গরমই বলা যায়। মিসর, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজিদরে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭৭ থেকে ৮০ টাকা।