স্ত্রী ও সন্তানকে হারিয়ে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন । তোতলামিতে আটকে যেত কথা। তার পরেও নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গা থেকে সরানো যেত না স্কুলছাত্রটিকে। বন্ধু বান্ধবরা এককথায় অনুসরণ করত তাকে। প্রতি বছর ‘ক্লাস প্রেসিডেন্ট’-এর দায়িত্ব তার জন্যই বাঁধা। দীর্ঘ কয়েক দশক পেরিয়ে সে দিনের জোসেফ রবিনেট বাইডেন আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর, আমেরিকার পেনসেলভানিয়ায়। তার বাবা জোসেফ এবং মা ক্যাথরিন ছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত। বাইডেনদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল খনিজ তেলের। অবস্থাসম্পন্ন পরিবারটি আচমকাই আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয় পঞ্চাশের দশকে। সেই ক্ষতি থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি বাইডেনের বাবা সিনিয়র জোসেফ। ফলে জন্মের পরে কয়েক বছর বাইডেন ছিলেন মামাবাড়িতে।
মধ্যবিত্ত পরিসরের ক্যাথলিক পরিবারেই দু্ই ভাই ও এক বোনের সঙ্গে বড় হন জো বাইডেন। ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বাইডেনের প্রাথমিক পড়াশোনা ক্লেমন্টের আর্চমেয়ার অ্যাকাডেমিতে। পড়াশোনায় বিশেষ আগ্রহ না থাকলেও ফুটবল এবং বেসবলে ছিলেন চৌকস। বিশ্ববিদ্যালয়েও ফুটবল খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে স্নাতক পাস করেন। বিষয় ছিল ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইংরেজি। ১৯৬৮ সালে তিনি সাইরাকিউজ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ল’ থেকে আইনবিদ্যায় ডিগ্রি পান। ৮৫ জন পড়ুয়ার মধ্যে তার স্থান ছিল ৭৬। মেধাতালিকায় বিশেষ এগোতে না পারলেও বাইডেন এই সময় মুক্তি পেয়েছিলেন স্কুলজীবনের তোতলামির সমস্যা থেকে। পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কবিতাপাঠ করে করে তিনি এই সমস্যা থেকে মুক্ত হন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়
বাইডেনের প্রথম চাকরি ছিল উইলমিংটন ল’ ফার্মে। ফার্মের প্রধান ছিলেন রিপাবলিকান উইলিয়াম প্যাট্রিক। বাইডেনের পরবর্তী কর্মস্থল ল’ ফার্মের কর্ণধার ছিলেন ডেমোক্র্যাট। তার সান্নিধ্যে বাইডেনও সক্রিয় ডেমোক্র্য়াটপন্থী হয়ে ওঠেন। এর পর ধীরে ধীরে আইনজ্ঞ বাইডেনকে ছাপিয়ে যায় তার রাজনীতিক সত্ত্বা। কাউন্টি কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করার পরে তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম অংশ নেন সিনেটর হওয়ার লড়াইয়ে। প্রথম প্রচেষ্টাতেই সাফল্য। ১৯৭২ সালেই তিনি ডেলাওয়্যার থেকে জুনিয়র সিনেটর হন।
এর মাঝে পথদুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা যান তার প্রথম স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু কন্যা নাওমি। শিক্ষাবিদ নেইলিয়া হান্টারকে ১৯৬৬ সালে বিয়ে করেছিলেন বাইডেন। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন নেইলিয়া। সঙ্গে ছিল তাদের তিন সন্তান। পথে ট্রাকের সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নেইলিয়া এবং ছোট্ট নাওমি।
বাইডেনের বড় ছেলে বো বাইডেনও রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন। ২০১৫ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার। ছোট ছেলে রবার্ট হান্টার বাইডেন নামী আইনজীবী এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা। নেইলিয়া এবং নাওমির অকালমৃত্যুর পরে জীবন থেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন বাইডেন। রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়াবেন ভেবেছিলেন। তাকে আবার জীবনের পথে ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব বাইডেন দেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী জিল ট্রেসি জ্যাকবসকে।
দীর্ঘ রাজনীতিক জীবনে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ অবধি বাইডেন ছিলেন ডেলাওয়্যারের ডেমোক্র্যাট সিনেটর। এর পর ২০০৯ থেকে ২০১৭ অবধি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই দফার মেয়াদে বাইডেন ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।