জেলা প্রতিনিধি:
আসন্ন আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর চার দিনের মাথায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ্ব মীর মহিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোবাইল) বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. সবেদ আলীর নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বন্ডবিল হাজরাতলায় বিএনপির নির্বাচনী অফিস ও রাত ১০টার দিকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড আনন্দধামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, আলমডাঙ্গার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবিরসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা এবং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পর পৌর এলাকায় যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতের দাপট সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে কে বা কারা ১৫-২০টি মোটরসাইকেলযোগে আনন্দধাম হাউসপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. সবেদ আলীর (মোবাইল) প্রতীকের অফিসে ভাঙচুর করে। এ সময় অফিসে ৭-৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা বসে কথা বলছিলেন। আচমকা তারা অফিসে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেই মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। প্রায় একই সময়ে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ডবিলে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মীর মহিউদ্দিনের নির্বাচনী অফিসেও ভাঙচুর করে এক দল যুবক। তারাও অফিসে ভাঙচুর করে স্থান ত্যাগ করে।
এবিষয়ে বন্ডবিল হাজরাতলা বিএনপির নির্বাচনী অফিসের কর্মী ও সমর্থকেরা জানান, ‘আমরা সন্ধ্যা থেকেই অফিসে বসে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলাম। হঠাৎ আনুমানিক রাত সাড়ে নয়টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে ১০ থেকে ১৫ জন আমাদের অফিসের সামনে আসে ও অতর্কিতভাবে অফিস ভাঙচুর করে ও আমাদের কর্মীদের বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। পরে তারা মোটরসাইকেলযোগে আলমডাঙ্গা শহরের দিকে চলে যায়।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন জানান, ‘আজ (গতকাল) রাতে হঠাৎ নির্বাচনী এলাকা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাতলা মোড়ে অবস্থিত আমার নির্বাচনী অফিসে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জন যুবক হামলা চালায় ও অফিস ভাঙচুর করে। তারা আমার কর্মীদের মারধর করে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের ক্যাডার বলেই আমার ধারণা। আমি বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে আলমডাঙ্গা থানায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একটি অভিযোগ করি। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ টহল দিচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. সবেদ আলী জানান, ‘আমার অফিসে কে বা কারা ২০-২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ভাঙচুর চালিয়েছে ও আমার কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। ভীতির পরিবেশ তৈরি করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও প্রশাসনের কাছে সুবিচার কামনা করছি। আমি এবিষয়ে বেশ কয়েকজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।’
আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠ থেকে বিএনপি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাঠছাড়া করতে ও ভোটারদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা। বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা, ভয়-ভীতি দেখানো ও প্রচারকাজে বাঁধা দেওয়া প্রমাণ করে, ভীতির পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সারা দেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ জোর করে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চাই। কিন্তু জনগণ সেটা হতে দেবে না।’
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবীর জানান, ‘আলমডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে দুজন মেয়র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের সংবাদ আমরা পেয়েছি। সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলমসহ আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী এম সবেদ আলী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’