তিন দিনে শিশুসহ শতাধিক রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি : সেবা দিতে চিকিৎসক-নার্সরা হিমশিম
আরএমও ডা. সাজিদ হাসান জানালেন- আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
জেলা প্রতিনিধিঃ
হঠাৎ করেই চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে শতাধিক শিশু রোগী। হাসপাতালের তথ্যানুসারে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে।
হাসপাতালের নির্ধারিত ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে রোগীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেককেই বারান্দা কিংবা করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দেড় বছরের শিশু সুমাইয়া। শিশুটির মা জানান, গত শনিবার দুপুর থেকেই পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিল সুমাইয়ার। রোববার শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়লে ভোরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
দামুড়হুদা উপজেলার সালমা খাতুন বলেন, দুদিন আগে তাঁর আড়াই বছরের ছেলের হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ানোর পরও কোনো কাজে আসেনি। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর এতটাই চাপ জায়গা না হওয়ায় বারান্দায় বিছানা পাততে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
হাসপাতালের তথ্যানুসারে গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ১২১ জন রোগী। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা ১০৭ জন, পুরুষ রোগী ৫ জন ও নারী ৯ জন। গতকাল মঙ্গলবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৪১ জন। এর মধ্যে ৩২ জনই শিশু। গত তিন দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৬ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাজিদ হাসান বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আসছে বেশি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বারান্দাতেও রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। অতিরিক্ত এই রোগীদের ভিড় সামলাতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া।
ডায়রিয়া থেকে প্রতিকারের বিষয়ে ডা. সাজিদ হাসান আরও বলেন শিশুর প্রথমবার পাতলা পায়খানা হলেই তাকে স্যালাইন খেতে দিতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এই ভাইরাস একজনের শরীর থেকে আরেকজনের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
তাই দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। যেসব শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। এর ফলে শিশু আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে আর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় কলেরা স্যালাইন, ওরস্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ সরবরাহ রয়েছে।