জেলা প্রতিনিধিঃ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন চুয়াডাঙ্গায় এখন নামমাত্র। বেশিরভাগ এলাকাতেই অমান্য করা হচ্ছে সরকারি সব নিষেধাজ্ঞা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত লকডাউনের চারদিন পার হতে না হতেই শহরের চিত্র প্রায় স্বাভাবিক সময়ের চেহারা মতোই হয়ে গেছে।
কাঁচা বাজার সীমিত পরিসরে খোলা থাকলেও পণ্যের দাম কিছুটা বেশি। নিত্যপণ্যের ও ওষুধের দোকান খোলা আছে। যে দোকানগুলো খোলা আছে, সেগুলিতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে করছেন কেনাকাটা। এক ক্রেতার হাতে অন্য ক্রেতার হাত লাগছে।
কিছু ক্রেতার মাস্ক ব্যবহার করলেও মাস্ক ছাড়া ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। আবার পাশাপাশি দাঁড়ানো কোনো একজন হাঁচি-কাশি দিলে পাশের লোকটি মুখ ঘুরিয়ে সরে যাচ্ছেন, ব্যস এটুকুই। আজ রবিবার সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার বড়বাজারসহ আলমডাঙ্গা, জীবননগর, দর্শনা, দামুড়হুদার বাজারগুলো ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। জনসাধারণ এমন অসচেতনতায় করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার, চাল, ডাল ও মাছ-মাংস কিনতে নানা বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। এই ভিড় ঠেলে সবাই যে যার মতো কেনাকাটা করছেন। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে একে অন্যের সাথে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। অন্যদের মতো বাজারে মাছ কিনতে আসেন মুখে মাস্ক পরে সুমন পারভেজ। তিনি বলেন, ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে।
অধিকাংশ লোকই সচেতন নয়, মুখে মাস্কও নেই। যার ফলে প্রয়োজনে বাজারে এসে অস্বস্তিতে ভুগছি।বাজারে মজুরের কাজ করেন হাবিব নামের এক ব্যক্তি। চালের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। মুখে মাস্ক কিংবা হাতে গ্লাভস কিছুই কিছুই ছিলো না তাঁর।
‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে, কেন মাস্ক পরেন না?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বস্তা টানি মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আল্লাহই ভাইরাস থেকে রক্ষা করবেন।
মাছের বাজারেও একই অবস্থা। এখানেও ভিড় ঠেলাঠেলি করে লোকজনকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। রাব্বি নামের একজন মাছ কিনছিলেন। মুখে মাস্ক পরেননি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় মাস্ক পড়া ভালো।
বড় বাজার গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী-পুরুষের ভিড়। বিশেষত বিকেলে দিকে। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই, গ্লাভস তো দূরের কথা। এবিষয়ে জানতে চাইলে আফসানা নামের এক নারী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে, মাস্ক পরা উচিত। কিন্তু রোজকার বাজারের টাকাই তো জোগাড় করা কষ্ট, সেখানে মাস্ক কিনমু কি দিয়া।
লকডাউন বাস্তবায়নে চুয়াডাঙ্গা শহর, আলমডাঙ্গা, জীবননগর, দর্শনা ও দামুড়হুদাসহ ছোট বড় সব বাজারেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে নিয়মিত টহল দিচ্ছেন পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে বাজারগুলোতে লুকোচুরি খেলা খেলছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পোশাকের দোকানদারেরা দোকানের সামনেই দাড়িয়ে আছেন।
পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট ঢুকলেই দোকান বন্ধ। ক্রেতা আসলে আবার দোকানের একটি শার্টার খুলেই চলেছে বেচাকেনা। সচেতন মহলের দাবি, এই সর্বাত্মক লকডাউনটি বাস্তবায়ন করতে হলে আরও কঠোর হতে হবে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে।