DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৮শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৮শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে যেন একটি ধারাবাহিক নাটক লিচু গাছে আম

DoinikAstha
এপ্রিল ২২, ২০২১ ৭:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ ফরিদ হোসাইন মাসুম :ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের বাড়ির একটি লিচু গাছে আম ধরার ঘটনা সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিচু গাছের থোকায় ঝুলতে দেখা যায় আম। কিন্তু মঙ্গলবার হঠাৎ রহস্যজনকভাবে সেটি ছিঁড়ে ফেলা হয়। আম ধরা ও ছেঁড়া এই দুই ঘটনা নিয়েই এখন সারাদেশে চলছে আলোচনা। করোনাভাইরাসের তীব্রতা-লকডাউন, আইডি কার্ড-মুভমেন্ট পাসের নানা বিতর্ককেও ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে লিচু গাছে আমের ছবি-ভিডিও।

এদিকে গত কয়েক দিন এ ঘটনার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি উদ্যানতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে তাদের আপত্তি থাকলেও পরিষ্কার করে কোনো বিশেষজ্ঞ তা বাতিল করেননি। অবশেষে জানা যাচ্ছে, চমক সৃষ্টির জন্য এটি ছিল সাজানো নাটক।

আরো পড়ুন :  বেনাপোলে তৃতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট, ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের ভোগান্তি

এক গাছে অন্য ফল শুধু গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব। তবে লিচু ও আমের ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক না। লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে এমন উদাহরণ নেই। লিচু ও আম এক পরিবারের উদ্ভিদ নয়। ক্রোমোজম সংখ্যা যদি এক হয়, তবে অনেক সময় ঘটতে পারে। সেটাও নয়। উদ্ভিদতত্ত্বে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।

কারণ আম ছেঁড়ার একদিন বাদে (বুধবার) সেই আমের বোঁটা শুকিয়ে গেছে, যা স্বাভাবিকভাবে আম ছিঁড়ে নেওয়ার পরে বোঁটার মতো নয়। সঙ্গে আঠাজাতীয় পদার্থের উপস্থিতিও রয়েছে বলে ধারণা হচ্ছে অনেকেরই।

 

আম ছিঁড়ে ফেলার পরও (বুধবার) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় ওই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। এর আগে সোমবার থেকে দুই কর্মকর্তা আম ধরার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি ম্যানুপুলেট করা হয়েছে, সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে। হয়তো এটি কেউ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিল। অথবা অন্য কোনো কৌশলে এটি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, লিচুর বোঁটাটি লম্বা হলেও আমেরটি স্বাভাবিকের তুলনায় খুব খাটো। এসব দেখে বিষয়টি খটকা লাগছে প্রথম থেকেই। ছিঁড়ে ফেলার কারণে এখন সেটা বোঝা যাচ্ছে। বোঁটা শুকিয়ে গেছে, যা স্বাভাবিক বোঁটার মতো নয়। বেশ কালচে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমরাও পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। আমটি রাখতেও হয়েছিল ওই পরিবারকে। কিন্তু সেটা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনা বেশি ছড়িয়ে পড়ছিল বলেই সেটি করা হয়েছে।

 

এদিকে গত কয়েক দিন এ ঘটনার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি উদ্যানতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। ফলে এটিকে একটি অলৌকিক ঘটনা মেনে নিয়েছিল অনেকেই। তবে প্রথম থেকেই কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলে আসছিলেন, যে কেউ আঠা দিয়ে লিচুর ডালে আমটি লাগিয়েও দিতে পারে। ফলে এটা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

পর্যবেক্ষণের জন্য কয়েক দিন অপেক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কারণ আমটি কোনো কৌশলে লাগানো হলে তা ঝরে পড়বে বা শুকিয়ে যাবে। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা এও বলেছেন, আমটি যদি বড় হতে থাকে, তখন সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে নেওয়া হবে। তখন এটা নিয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পরদিন আমটি ছিঁড়ে ফেলা হয় রহস্যজনকভাবে। এরপর থেকেই ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ এটিকে নাটক বলে অভিহিত করছেন। তবে যারা নিজের চোখে লিচুর গাছে আম ঝুলতে দেখেছেন তারা বিষয়টি অলৌকিক বলেই ধরে নিয়েছেন। এ নিয়ে ওই এলাকা, এমনকি সারাদেশে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

এদিকে বুধবার বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমি জানার পর থেকেই অসম্ভব বলে ধরে নিয়েছি। এমন ঘটনা কোনোভাবে হতে পারে না।

তিনি বলেন, এক গাছে অন্য ফল শুধু গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব। তবে লিচু ও আমের ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক নয়।

রফিকুল ইসলাম বলেন, লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে এমন উদাহরণ নেই। লিচু ও আম এক পরিবারের উদ্ভিদ নয়। ক্রোমোজম সংখ্যা যদি এক হয়, তবে অনেক সময় ঘটতে পারে। সেটাও নয়। উদ্ভিদতত্ত্বে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।

লিচু গাছটির মালিক আবদুর রহমান বলে আসছিলেন, কোনো পদ্ধতি নয়। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আম ধরেছে। গত শনিবার সকালে তার নাতি হৃদয় ইসলাম এসে তাকে জানায়, লিচুগাছে একটা আম ধরেছে। আমি গিয়ে গাছে লিচুর থোকার একপাশে একটি আম দেখে অবাক হই। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ এটি দেখতে ভিড় করেন। এরপর সোমবার বিষয়টি দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমে উঠে আসে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার এলাকার সাবেক মেম্বার সিকিম লিচুগাছ থেকে আমটি ছিঁড়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেন আবদুর রহমান।

অভিযুক্ত মেম্বার প্রথমদিকে আমটি ছিঁড়ে ফেলার কথা স্বীকার করলেও পরে বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেন।

তিনি বলেন, সারাদিন অনেক দূর থেকে গাড়ি নিয়ে মানুষ আসছে। এতে সোমবার তার ভাতিজা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। করোনার ঝুঁকি বেড়েছে। তাই আবদুর রহমানকে মানুষের সমাগম কমানোর জন্য বলতে গিয়েছিলাম। ওই সময় কেউ আমটি ছিঁড়ে ফেলেছে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০