গাইবান্ধায় গায়ের জোরে বিদ্যালয়ের কাজ বন্ধ করল আ’লীগ নেতা
শেখ মো: আতিকুর রহমান আতিক, মফস্বল ডেস্ক থেকে :
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ী বোরহানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াস ব্লকের নির্মাণ কাজের জন্য ভবনের পুরাতন র্যাম ভাঙার প্রথম দিনেই কোন কারণ ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে কাজ বন্ধ করে দিলেন স্থানীয় আওযামী লীগ নেতা মতিউর রহমান রানা।
২০ আগষ্ট শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কমিটির সভাপতিকে না জানিয়েই একক সিদ্ধান্তে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এই উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধের ঘোষণা দেন তিনি।
এতে করে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিষয়টি ২১ আগষ্ট শনিবার দুপুরে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহেরা নাজনীন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান রানার দাদা মৃত সিরাজুল রহমান ছিলেন বিদ্যালয়ের জমি দাতা।
তার মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী রানার বাবা মকবুল হোসেন এই পদটি পান।
কিন্তু অদৃশ্য কারণে রানার বাবা জীবিত অবস্থায় তাকে বাদ দিয়ে বেআইনিভাবে রানা পদটি দখলে নেয়। এছাড়া বিগত এডহক কমিটিতে প্রভাব বিস্তার করে জোর খাটিয়ে পরপর দুইবার সভাপতি পদেও ছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান রানার বিদ্যালয় কমিটিতে দাতা সদস্য হিসেবে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থারও দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, ২০১৮ সালে তৃতীয় বার সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল রানার।
কিন্তু বিধি অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই বারের বেশি সময় কোন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারেন না। এই কারণে সেই বছর তিনি সভাপতি হতে না পেরে ও একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ে পিয়ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
যা উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অবৈধ বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন।
এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সে সময় তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জোব্বার, সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান মন্ডল ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিন মিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন রানা ।
মামলাটি পুরোপুরি নিষ্পতি না হওয়ায় বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্থগিত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান রানা বর্তমানে বিদ্যালয় এডহক কমিটির দাতা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই পদ ও সরকার দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে নানা শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই রানা এর আগেও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বাধা প্রদানসহ নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। যার ফলে বিদ্যালয়টির বিভিন্ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এসবের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ তুললে তাকে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার ভয়ও দেখানো হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পিয়ন সাকিল মিয়া বলেন, ‘বিকেলে র্যাম ভাঙ্গার কাজ হচ্ছিল। হুট করে রানা এসে কাজ বন্ধ করে দিল। এটা তো স্কুলেরই ক্ষতি হল। এর আগেও তিনি অনেক ঝামেলা করেছিল স্কুলে।’
প্রধান শিক্ষক শাহজাদী হাবিবা সুলতানা (পলাশ) বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশ পেয়েই র্যাম ভাঙ্গার কাজ শুরু করা হয়। এই বিষয়টি কমিটির সকলকে আগেই অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু রানা সাহেব অযৌক্তিক প্রশ্ন তুলে গায়ের জোরে কাজ বন্ধ করে দেয়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান রানা অভিযোগ করে জানান, ‘তাকে না জানিয়েই বিদ্যালয়ের র্যাম ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। এছাড়া এই বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কী না; তা যাচাইয়ের জন্য সাময়িকভাবে তিনি কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, ‘যে স্থানে র্যাম ভাঙার কাজ চলছিল; এটা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছিল না। তাছাড়া এই কাজে অনুমতি ছিল কী না; তার জন্যই কাজটা আটকেছি। তবে আমি বিদ্যালয়ের র্যাম ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দেয়নি।’
কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কাজ আটকানোর আগে কিংবা পরে বিষয়টি কী অবহিত করেছেন; এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না আমি কাউকে বিষয়টি জানাইনি। তারা আমাকে ফোন করেনি; এজন্য জানাতে পারিনি।’
এ নিয়ে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহেরা নাজনীন বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে আগামী রবিবার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।’