গাইবান্ধা জেলা পরিষদের শতবর্ষী পুকুর রক্ষায় হাইকোর্টের রুল
শেখ মো: আতিকুর রহমান আতিক, মফস্বল ডেস্ক থেকে :
গাইবান্ধা সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে জেলা পরিষদের প্রায় ১.৫ একরের একটি শতবর্ষী পুকুর রক্ষায় হাইকোর্টে রুল ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
বিষয়টি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল, রাজশাহী কার্যালয় থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেন।
৫ আগষ্ট রবিবার বিচারপতি মো. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এই রুল ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এই মামলা দায়ের করেন।
রুলে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চীফ এ্যাক্সিকিউটিভ অফিসারকে মাটি ভরাট থেকে রক্ষা, পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণে বিবাদীগণের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবেনা এবং পুকুরটি রক্ষায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চীফ এ্যাক্সিকিউটিভ অফিসারকে ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করে পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সাথে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চীফ এ্যাক্সিকিউটিভ অফিসারকে উক্ত পুকুরে মাটি ভরাট ও ভরাটকৃত স্থানে অডিটোরিয়ামসহ অন্য যেকোন স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী।
অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান আধার হিসেবে পুকুরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বন্যা পরবর্তীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে এ দীঘির অবদান অনস্বীকার্য।
অধিকন্তু গাইবান্ধা শহরের ঐতিহাসিক সৌন্দর্য, উন্নত পরিবেশ ব্যবস্থা রক্ষার্থে এ পুকুরের রয়েছে বিশেষ অবদান।
সম্প্রতি জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত দেশের বিদ্যমান আইন এবং আদেশ অমান্য করে পুকুরটি ভরাট করে সেখানে মাল্টিপারপাস বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পুকুটি ভরাট করে এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রাচীন এ পুকুর ভরাট হয়ে গেলে উল্লেখিত এলাকার জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হবে মর্মে এলাকাবাসী আশংকা করছে।
পুকুর ভরাটের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে এবং পুকুর রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসী বেলা বরাবর আইনী সহায়তার আবেদন করলে জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) মামলাটি দায়ের করেন।
এ বিষয়য়ে জেলা পরিষদের নির্বাহী আব্দুর রউফ তালুকদার মুঠো ফোনে বলেন, এডিপির অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাংলাদেশ সরকারের একটি মেগা প্রকল্পে সারা দেশে দশটি অডিটোরিয়ামের মধ্যে গাইবান্ধায় একটি অডিটোরিয়াম নির্মানের সিদ্ধান্ত হয় এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তা ইজিপি টেন্ডারও হয়।
টেন্ডারের পর যথারীতি পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়।
তিনি বলেন, এই পুকুরটি একটা মজা পুকুর ছিলো। মহামান্য হাইকোর্ট রুল ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরআগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা সে চিঠি পেয়ে পুকুরের মাটি ভরাটের কাজটি স্থগিত করেছি।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।