লামায় ম্রো পাড়ায় হামলার প্রতিবাদে পানছড়িতে বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলায় রেংয়েন কার্বারি (ম্রো) পাড়ায় হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি উপজেলা শাখা।
আজ বুধবার (৪জানুয়ারি/২৩) সকাল ১১টার সময় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রিপন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও সভাপতি এস মঙ্গল চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক পলেবয় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) উপজেলা শাখার সভাপতি তৃঞ্চাঙ্কর চাকমা প্রমুখ।
ইউপিডিএফ সংগঠক পলেবয় বলেন, লামায় রেংয়েন কার্বারি পাড়ায় হামলা নতুন নয়। এর আগে ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলা ও বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর ও বুদ্ধমূর্তি লুট করা হয়েছে। তাদের জুমভূমি, ফসল, বাগান-বাগিচা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বাগান কেটে দেওয়া হয়েছে, খাবার পানির উৎসে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪শ একর জুমভূমি বেদখল করে তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ গত বছরের এপ্রিল থেকে জবরদখল কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু সরকার-প্রশাসন রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে তারা বার বার এমর বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।
নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে এসব ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। অথচ সরকার-প্রশাসন চাইলে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু তা না করে উল্টো যারা এসবের প্রতিবাদ করে তাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালায়। তিনি লামা রাবার কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে ম্রো ও ত্রিপুরাদের রক্ষা করার দাবি জানান।
যুব নেতা বরুণ চাকমা বলেন, বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক আমলারাই প্রাইভেট কোম্পানি লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ গঠন করেছে। এই কোম্পানিকে ব্যবহার করে সরকার লামা সরইয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় রাবার কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া দেলোয়ার নুরু ও মহসিন গংরা রেংয়েন ম্রো পাড়ায় হামলা চালিয়ে ম্রোদের ৩টি বড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে ও ৬টি বাড়ি ভাঙচুর্ ও সহায়-সম্পত্তি লুটে নিয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ম্রোদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও হামলার বিচার দাবি করেন।
পিসিপি নেতা তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা ম্রো পাড়ায় হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সমাবেশের সভাপতি এস মঙ্গল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর সেটলার ও ভূমিদস্যুরা যেন রাজা হয়ে গেছে। তারা পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল করতে কাউকে আর পরোয়া করছে না। ইচ্ছেমত ভূমি জবরদখল করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার-প্রশাসন এই ভূমিদুস্যুদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত এ ধরনের হামলা, ভূমি বেদখলের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।