DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাবুধবার ২৭শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

নিহত সেনা সদস্য নাজিম উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

Astha Desk
মার্চ ১৪, ২০২৩ ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিহত সেনা সদস্য নাজিম উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

 

রংপুর প্রতিনিধিঃ

 

বান্দরবানে সেনা সদস্যদের ওপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) অতর্কিত গুলিবর্ষণে নিহত সেনা সদস্য মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসতে চাওয়া নাজিম উদ্দিন যে নিথর দেহে বাড়ি ফিরবেন কেউ ভাবতেই পারেনি। তার এমন মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের সাথে গ্রামবাসীও শোকে মুহ্যমান।

 

সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়ায় নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। কাঁদতে কাঁদতে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া স্ত্রী ও দুই সন্তান হয়ে পড়ছেন অচেতন। যেন নাজিম উদ্দিনের অকাল মৃত্যুতে পুরো পরিবারের স্বপ্ন তছনছ হবার পথে।
স্বামী ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের সাথে স্ত্রী চামেলি বেগমের সবশেষ কথা হয়েছিল শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে। পরদিন রোববার (১৩ মার্চ) বিকেলে আসে স্বামীর মৃত্যুর খবর। চামেলির সবকিছুই ছেয়ে গেছে ঘোর অন্ধকারে। নিজের কথা না হয় বাদই থাকলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বড় সন্তান নায়েমুজ্জামান চঞ্চল এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান নীরবের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সে ভাবনা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে চামেলিকে; স্বজনরাও নির্বাক।
নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী চামেলি বেগমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কিছু বলতে পারছিলেন না।

 

হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। স্বজনরা তাকে সান্তনা দিলেও নিজেকে সামলে নিতে পারছিলেন না চামেলি। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, আমি সব স্বপ্ন তো ভেঙে গেল। এখন ছেলে দুটোকে কিভাবে পড়ালেখা করাব, কি হবে আমাদের? কেন আল্লাহ আমার স্বামীকে এভাবে কেড়ে নিলো। সরকারের কাছে চাওয়া আমার সন্তানদের যেন দায়িত্ব নেয়।

 

মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর ধরে অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রংপুর সদর উপজেলার ঘাঘটপাড়া গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে। নাজিম উদ্দিনরা দুই ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ছিলেন সবার বড়।
সোমবার (১৪ মার্চ) পৌনে ১টার দিকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে কফিনবন্দি মরদেহ আনা হয় নাজিম উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বড় ভাইয়ের কফিনের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছোট ভাই আজিম মাহমুদ বললেন, শনিবার রাতে ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। ভাই বলেছিলেন, ঈদে ছুটি পেলে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে ভাই আসলেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।

আরো পড়ুন :  নলছিটিতে নদী-খালে অবৈধ বাধ অপসারণ ও লীজ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

 

সদ্য পদোন্নতি পাওয়া মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের প্রশংসা মহল্লাজুড়ে। ছুটিতে বাড়ি আসলেই তিনি স্বজন ও প্রতিবেশিদের খোঁজখবর রাখতেন। হঠাৎ তার এমন মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতির আকুতি তাদের।
দেশের জন্য নাজিম উদ্দিনের এই আত্মত্যাগকে শহীদি মৃত্যু মনে করেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র। তিনিও চান নাজিমের পরিবারের পাশে এগিয়ে আসবে সরকার। মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ যেন নিহত নাজিম উদ্দিনের সন্তানদের পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে এতিম এ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের বিষয়টিও সরকারের নিশ্চিত করা উচিত। কারণ নাজিম উদ্দিনের এই মৃত্যু দেশের জন্য।

 

 

এদিকে সোমবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে নাজিম উদ্দিনের মরদেহ প্রথমে রংপুর সেনানিবাসে আনা হয়। সেখানে অনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ ঘাঘটপাড়া গ্রামে নেয়া হয়। বাদ যোহর সোয়া দুইটার দিকে সেখানকার বাগানবাড়িতে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এসময় সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মাহবুব আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

উল্লেখ্য, রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে বান্দরবনের রুয়াংছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামের একটি সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী দল সেনা সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান নাজিম উদ্দিন। এছাড়া আহত দুই সেনা সদস্য বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দেশ মাতৃকার সেবায় নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুতে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

 

আইএসপিআর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশে গমন করা দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন সেনা সদস্যরা। তাদের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে কেএনএ দলের সন্ত্রাসীরা।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০