ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবীতে পানছড়িতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ
পানছড়ি প্রতিনিধিঃ
পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতব +জেএসএস)’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশের প্রতিবাদে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে” খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি। আজ শনিবার (১৮ মার্চ/২৩) সকাল ১১টার দিকে একর্মসূচী পালন করা হয়।
সমাবেশ পূর্ব বাবুড়াপাড়া বাজার হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়ে করল্যাছড়ি স্কুল মাঠে পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমার সভাপতিত্বে ও চেঙ্গী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে মিলিত হয়।
চেঙ্গী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমার স্বাগত বক্তব্যের বিক্ষোভ সমাবেশে রাখেন, ১নং লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা, ৪নং লতিবান ইউপি চেয়ারম্যান ভূমিধর রোয়াজা, ৩নং পানছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান উচিত মনি চাকমা, ২নং চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা ও ১নং লোগাং ইউনিয়নের ১, ২ ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য মিতি চাকমা ও তরুণ জ্যোতি চাকমা প্রমূখ।
স্বাগত বক্তব্যে কালাচাঁদ চাকমা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণও অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমাদের আশা ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে জুম্ম জনগণ সুখে থাকবে। কিন্তু না, আমরা যুগ যুগ ধরে অত্যাচারিত, নিপীড়িত-নির্যাতিত এবং স্বাধীকার, অধিকার হারা। এখনো আমরা অধিকার পাইনি।
তিনি বলেন, আমাদের বৈ-সা-বি উৎসব সমাগত। কিন্তু দুঃখের বিষয় গতকাল ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের খবর পেয়ে কখন কি হয় তা নিয়ে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। এই সময়ে যদি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত আরো লেগে যায় তাহলে আমাদের জনগণের অবস্থা কি হবে?
ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে আমরা অনেক ভাই হারিয়েছি, আমাদের অনেক মা-বোনের বুক খালি হয়েছে, আমরা সেই ’৮৬ সালে পানছড়ি গণহত্যা ও ’৯২ সালে লোগাং গণহত্যা দেখেছি। আমরা আর কত ঘটনা দেখবো? আমাদের হুঁশ এখনো হয়নি, এখনো ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি-হানাহানি করছি।
তিনি জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অচিরেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করুন, জুম্ম জনগণকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত থেকে মুক্ত করুন’। তিনি ইউপিডিএফ সভাপতির প্রতিও একই আহ্বান জানান।
লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা বলেন, গতকাল মাচ্ছ্যছড়ায় ২ দলের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে আমরা নিশ্চয় সবাই জানি। এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের কারণে আমরা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছি। সেই ’৮৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের ইতিহাস অনেক লম্বা হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সামনে আমাদের বৈ-সা-বি উৎসব আসছে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের মাধ্যমে যদি পরিবেশ-পরিস্থিতি খারাপ করে ফেলি তাহলে আমরা কিভাবে এই উৎসব পালন করবো? কাজেই আমরা চাই না এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক।
তিনি আরো বলেন, আমরা এলাকাবাসী সকলে শান্তিতে থাকতে চাই। ’৮৩ সাল থেকে আমরা দেখেছি অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, অনেকে সন্তানহারা হয়েছে, অনেকে পিতা হারা, অনেকে স্বামী, আত্মীয়-স্বজন হারা হয়েছে। কাজেই এ ধরনের ঘটনা আর আমরা দেখতে চাই না। গতকাল মাছ্যছড়ার ২ দলের সংঘর্ষের পর আরো বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমরা এলাকাবাসী আর সেটা হতে দেবো না। আমরা যদি সবাই সজাগ থাকি তাহলে কেউই আর এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ইউপিডিএফ’র কর্মী মরলেও জুম্ম জাতি, জেএসএস’র কর্মী মরলেও জুম্ম জাতি। যদি সংঘাত অব্যাহত থাকে তাহলে আমাদের জাতি রক্ষায় কূল কিনারা পাবো না। কাজেই, সংঘাত বন্ধ করতে জনগণকে সোচ্চার ও সচেতন হতে হবে। আমরা জনগণ আর সংঘাত চাই না তা দলগুলোকে জানিয়ে দিতে হবে। যারা সংঘাত বন্ধ করতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি জেএসএস ও ইউপিডিএফকে অচিরেই সংঘাত বন্ধ করে জুম্ম জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার আহ্বান জানান।
লতিবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভূমিধর রোয়াজা বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত, মারামারি জাতির জন্য ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ হয় না। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত আমাদের চলার পথে বিভিন্ন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই সংঘাত বন্ধের জন্য আজকে এই সমাবেশে মিলিত হয়েছি। এই সমাবেশ থেকে আমরা জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমা ও ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত খীসাকে অচিরেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি উভয় দলের উদ্দেশ্যে বলেন, জেএসএস ও ইউপিডিএফ-কে অবশ্যই সমাঝোতার ভিত্তিতে চলতে হবে। না হলে আমরা জাতির জন্য কিভাবে আন্দোলন করবো, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কিভাবে অর্জিত হবে?
তিনি বলেন, গতকালকের সংঘাতের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত। সামনে আমাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ঘনিয়ে আসছে। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালন করতে চাই। আমরা সবাই শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
পানছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান উচিত মনি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা নিপীড়িত-নির্যাতিত। কিন্তু এই নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ যদি আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত লেগে থাকে তাহলে আমরা কখনোই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো না।