শ্যামগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, ৮০ দোকান পুড়ে ছাই অর্ধশত কোটি টাকার উপরে ক্ষয়-ক্ষতি
মোঃ জায়েজুল ইসলাম/গৌরীপুর প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ মধ্যবাজারে বুধবার দিনগত রাঁত ১০টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অন্তত ৮০টি দোকান মালামালসহ পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় তিন ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান জানা না গেলেও ধারনা করা হচ্ছে অগ্নিকান্তে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার উপরে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বুধবার দিনগত রাঁত ১০টার দিকে শ্যামগঞ্জ মধ্যবাজার থেকে আশা সিনেমা হলের দিকে যাওয়ার রাস্তায় মদক পট্টিতে হোটেল ও হার্ডওয়ারী দোকান থেকে আগুন উঠতে দেখা যায়। মহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা চার দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
খবর পেয়ে প্রথমে পূর্বধলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। পরে আগুনের ব্যাপকতার কারণে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কার্যক্রমে অংশ নেয়। আশেপাশে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও জায়গা না থাকায় আগুন নেভানোর কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। পরে শ্যামগঞ্জ বড় মসজিদের পানির হাউজ ও দুরের পুকুর থেকে পানি এনে পাশ্ববর্তী বিল্ডিংয়ের উপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে দেখা গেছে। প্রায় ৩ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। এরই মধ্যে অন্তত ৭০-৮০টি দোকান মালামালসহ পুড়ে গেছে।
এসব দোকানের মধ্যে মুদি দোকান, কাপড়ের দোকান, ফলের দোকান, রংয়ের দোকান, সুতার দোকান, জুয়েলারী দোকান, জালের দোকান, কাঁচা মালের দোকানসহ বাসাবাড়ীও রয়েছে। শ্যামগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী তিলক রায় টুলু, কামাল সরকার জানান, ওই জায়াগার একটি হোটেল ও হার্ডওয়ারী দোকান থেকে আগুন উঠতে দেখা গছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত তপন সরকার, রুহুল আমিন, হরিদাস বাবু, সত্যেন্দ মোদক জানান আগুনে তাদের সব পুরে ছাই হয়ে গেছে। সব হারিয়ে আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার সময় ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের বেলতলী নামক স্থানে ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সার সংঘর্ষে ২জন নিহত ও ৩জন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের বেলতলী দক্ষিণপাড়া গ্রামের রশিদের ছেলে অটোরিক্সা চালক হুমায়ুন (২০) ও একই ইউনিয়নের বেলতলী মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে রুবেল মিয়া (৩২)।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, আগুন লাগার খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকজনের খবর দেই এবং দ্রুত ঘটনা স্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ তদারকি করি।
খবর পেয়ে, ১৬১, নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খান, গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক মোঃ মাসুদ সরকার জানান, আগুনের খবর পেয়ে ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা, পূর্বধলা, গৌরীপুর, ইশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর জন্য কাজ করে। আগুনে ৮০টি দোকান মালামালসহ ভস্মিভুত হয়েছে। সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন ও আগুনের সুত্রপাত নির্ণয়ের জন্য প্রশাসন ঘটনাস্থলে কাজ করছে।