জয়পুরহাটে খাল পুনর্খনন, কৃষকের বোরো ধান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ
জয়নাল আবেদীন জয়/জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের ফুলদিঘী দৌলতপুর মৌজার শত বছরের খাল (খাড়ি) বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গত এপ্রিল মাস থেকে পুনঃখনন কাজ শুরু করে। ১০ ফুট চওড়া ও ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ তিন প্যাকেজের এক কিলোমিটার ৩৫ লক্ষ টাকার ওই খাল ভেকু মেশিন দিয়ে ঠিকাদার দুই পাশের কৃষকদের কোন নোটিশ ছাড়াই পুনঃখনন শুরু করে।
খালটি ১০ ফুট চওড়া করে কাটা হলেও খালের উভয়পাশে ২৫ ফুট মাটি রাখার কারণে কৃষকের জমির বোরো ধানের জমিতে মাটি চাপা পড়ে। আর মাত্র ১০-১২ দিন পার ওই জমির পাকা ধান কৃষকরা কেটে ঘরে তুলতে পারত। ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ খাল খননের কাজ শেষ হয়ে গেছে। মেসার্স আলিফ কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কতৃক চলতি বছর মার্চ মাস থেকে ৪টি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে।
সোমবার ৮ মে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের আলেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিকৃত জমির ধান রক্ষার্থে খাল কাটার কাজ বন্ধ রাখার দাবি করেছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তারা জানান, ঠিকাদার তাদের কোন রকম না জানিয়েই খাল কাটা শুরু করে। কৃষকরা ঠিকাদারকে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ বন্ধ না করে সরকারী কাজের কথা বলে কৃষকদের ভয়ভীতি দেখায়। সরকারী কাজে বাধা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এই বলে হুমকিও দেয়া হয়। এই ভয়ে নিরীহ কৃষকরা চুপ হয়ে যায়৷ প্রায় ৩ কিলোমিটার দৌলতপুর খাল (খাড়ি) পুনঃখনন কাজ খাল এলাকার কৃষকদের না জানিয়ে শুরু করায় খালের উভয়পাড়ের কৃষকের ২০ বিঘা জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে কৃষকদের আহাজারি।
দৌলতপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল বলেন, অনেক টাকা খরচ করে আমরা খালপাড়ের নিজ জমিতে বোরা ধান চাষ করেছি। ১২ দিন পর এই ধান তাদের ঘরে ওঠার কথা। কিন্তু যেভাবে ভেকু মেশিনে খাল খননের কাজ করা হচ্ছে তাতে ৮০ ভাগ ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
দৌলতপুর গ্রামের কৃষক ফজলুল হক দৈনিক আস্থাকে বলেন, আগে জানলে আমরা খাল পাড়ে জমিতে ধান লাগাতাম না। আমার তিন বিঘা জমি খাল পারে আছে। ১২ শতক জমির ধান মাটির নিছে চাপা পড়ে গেছে। কষ্ট করে চাষ করে এখন ৭ মন ধান কম পাবো৷ শুধু আমার নয় তিন কিলোমিটার খাড়ির দুই পাশে প্রায় ৫০ বিঘার মত সম্পত্তির ধান নষ্ট হয়ে গেলো৷
আলিপুর গ্রামের কৃষক নাসির সরদার জানান, আমাদের বোরো ধানের আশায় দিন গুনছি। এই সময় আমাদের যেটুকু জমি খালের পাশে রয়েছে সেই ধানও গেল। আমাদের দেখার কেউ নেই। প্রথমে আমি বাধা দিয়েছিলাম। সরকারি কাজে বাধা দিলে ধরে নিয়ে যাবে এই ভয়ে আর কিছু বলিনি। তারাও আমাদের কোন নোটিম করেনি৷
ঠিকাদারের প্রতিনিধি মাছুম আহম্মেদের নিকট মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্বোধনের সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে খাল খনন উদ্বোধন করেন৷ তারা কৃষকের জমিতে নয়, খাল খনন করছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সরকারি জায়গায়।
জয়পুরহাট বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আশেকুর রহমান দৈনিক আস্থাকে বলেন, খাল খননের ফলে কৃষকের আধাপাকা ধান নষ্ট হবে এ কাজ আমরা করতে দেব না। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিষেধ করেছি তারা যেন ধীর গতিতে কাজ করে । কৃষকরা যদি আমাদের একটা অভিযোগ দিত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না৷