DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ২৯শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাশুক্রবার ২৯শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিও নিষেধাজ্ঞায় পড়বে

Astha Desk
মে ২৮, ২০২৩ ৫:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিও নিষেধাজ্ঞায় পড়বে

 

আস্থা ডেস্কঃ

ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, আমলা সব পক্ষই সমভাবে চাপে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে প্রশাসন ও বিচারবিভাগের উপর ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ কমতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে আগের চাইতে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। আগামী সাত মাস পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র্রের ভিসানীতির কারনে এমনটা হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

 

 

একইভাবে বিএনপিকেও মহাচাপ অনুভব করতে হবে, তারা যে নির্বাচন বয়কটের চিন্তা করছে এবং আন্দোলনের ছক তৈরি করছে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরতে হবে এবং নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীকেও এখন থেকে সতর্কতা থাকতে হবে।

 

গণতান্ত্রিক কর্মসূচি, মানুষের নিরাপত্তা এবং মানবিক বিষয়গুলোতে মানুষের অধিকার নিশ্চিতে ভূমিকা দেখাতে হবে। নেতিবাচক কোনো কাজ সম্পাদিত হলে ব্যক্তির সাথে সাথে পুরো দেশকেও সেই চাপের মুখোমুখি হতে হবে।

 

মার্কিন এই ঘোষণাকে আওয়ামী লীগ, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে ‘স্বাগত’ জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ভিসানীতি ঘোষণার পর সরকার, বিরোধীদলসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের ঘোষণার পরদিন গাজীপুর সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলও সতর্ক থেকেছেন, একই নির্বাচন কমিশনের যে অগ্নিপরীক্ষা ছিল তারাও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন।

 

রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও ক্ষমতাসীন দলসহ বড় তিন দল মার্কিন ডাকে ঘোষণার পরদিনই এক টেবিলে বসতে বাধ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির অতীতে অগ্নি সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরেছে। বিএনপি ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপে গণতন্ত্র বিপর্যয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে মানুষ যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে নিতে পারবেন বলে মতামত দেন জাতীয় পার্টি।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞার চাইতেও কঠিন হতে পারে। নিকট অতীতে কেবল উগান্ডা বা নাইজেরিয়ার মতো অত্যন্ত অনুন্নত গণতন্ত্র কিংবা স্বৈরতান্ত্রিক দেশের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত অনিয়মকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তার বিস্তর অনেক বেশি।

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয় বিএনপির জন্যও রয়েছে।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীয়ে সরকার চাপ অনুভব করছে না। এটি সবার জন্য সতর্কবার্তা। বিএনপির জন্যও প্রযোজ্য।

 

এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ‘বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই প্রতিধ্বনি’। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজনে সব প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এবং একই সঙ্গে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও অধিকারচর্চাকে সহিংসভাবে দমনের যেকোনো নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই সুস্পষ্ট বার্তা। বিএনপি বিশ্বাস করে, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীন কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। কেবল একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনই তা সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে স্যাংশন, নতুন ভিসানীতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকেও চাপে রেখেছে। আগামী সাত মাস পর বিএনপির জন্য আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশন তৈরি হচ্ছে, নতুন এই ভিসানীতির ফলে প্রশাসন ও বিচারবিভাগের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ কমে আসবে। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি ছাড়াই নৌকা প্রার্থীর পরাজয়ও ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় সতর্কবার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন :  আইনজীবী হত্যার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, আইনি প্রক্রিয়ার নির্দেশ

 

বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিসানীতি ঘোষণার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও প্রকৃতপক্ষে বিএনপির জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং নির্বাচন প্রতিহতের হুমকি দেয়ার মতো বিষয়ে দলটি হোঁচট খেতে পারে। এর ফলে দলটির নির্বাচন বয়কট প্রবণতা, দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি এবং বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে নালিশ দেয়ার প্রবণতা কমে আসবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। হয়তো বিএনপিকে শেষ সময়ে এসে শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

 

কারণ নতুন ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো রকম অনিয়ম, হস্তক্ষেপ ও বাধা দান করা হলে এর সাথে জড়িত যেকোনো ব্যক্তি ও তার পরিবারকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। ভুয়া ভোট প্রদান, ভোটার ও নির্বাচনি এজেন্টদের বাধা দান, নির্বাচনি সমাবেশে হামলা, গায়েবি মামল, নির্যাতন-নিপীড়ন, মত প্রকাশে বাধা দান ইত্যাদি কাজ নির্বাচনে অনিয়ম ও হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে জানান বিশ্লেষকরা। এসব কাজে জড়িত থাকলে সরকারের সব পর্যায়ের ব্যক্তি কিংবা মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিরোধী দলেরও যে কেউ এই ভিসানীতির তোপে পড়তে পারেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতেয়াজ বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্যরাও নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন। কারণ বিরোধী দল সবসময়ই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে থাকে। অনেক সময়ে সেখানে প্রাণহানি ঘটে। সহিংস ও জ্বালাও-পোড়াও দেখা যায়। সেই কারণে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এই নীতিতে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধারণা করছি অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক কারণে মার্কিন সরকার এ কাজটি করছে। নতুন এই ভিসানীতি শুধু দ্বিপক্ষীয় নয় মার্কিন সরকার সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হয়েছে বলে আমরা জানি। এই নীতিতে সরকারি, বিরোধী এবং আমলা সব পক্ষই সমভাবে চাপে থাকবে। যেহেতু বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে আগের ধারা থেকে বের হয়ে সে ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ থাকবেই। তারা নির্বাচন বয়কট করার মতো পরিস্থিতি এখন অনেকটাই কমে যেতে পারে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ বিএনপি নয়, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের ওপর ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ কমতে পারে। মন্ত্রী, আমলা, নিরাপত্তা বাহিনীও এবার সতর্কতার মধ্যে থাকবে। এ ছাড়া গাজীপুরের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তবে এটি কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। কারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী ছিল না এবং ভোটারদের হাতে বিকল্প ছিল না। বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায় না।’

 

তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ার পেছনে মার্কিন ভিসানীতির প্রভাব ছিল বলে মনে করছি। এবার মাশুল দেয়ার আতঙ্কে অনেকেই অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে এটিই স্বাভাবিক। আর এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সতর্ক বার্তা বলেও আমি মনে করছি।’

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০