বিএনপির র্টাগেট আগামী কালকের সমাবেশ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিএনপির কর্মসূচিতে সরকার হার্ডলাইনে থাকলেও আপাতত কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি। কোনো ফাঁদেও পা দিতে চায় না তারা। পাশাপাশি জড়াতে চায় না নিজে থেকে কোনো সংঘর্ষে। ইতোমধ্যে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশকে মহাসমুদ্রে পরিণত করার টার্গেট নিয়ে দলটি প্রস্তুত শেষ করেছে।
মহাসমাবেশের মাধ্যমে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বার্তা দিতে চায় তারা। কর্মসূচি সফল করতে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী ঢাকায় আসতে বাধার মুখে পড়তে পারে, কৌশলে সেই বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। এরপরও মহাসমাবেশে বাধা দেওয়া হলে বিএনপির কর্মসূচি যে কোনো দিকে টার্ন নিতে পারে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মতে, দলের নেতাকর্মী ঢাকায় অবস্থান নিয়ে কয়েকদিন বড় কর্মসূচি করতে পারলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও প্রশাসনে এক ধরনের আন্দোলন ভীতি তৈরি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের আন্দোলন নিয়ে আস্থা বাড়বে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বিদেশি প্রভাবশালী কিছু দেশের আগ্রহ আছে। রাজধানীতে আন্দোলনের শক্তি দেখাতে পারলে বিএনপি বিদেশিদের সমর্থন পাবে। বিশ্ব রাজনীতি ও আঞ্চলিক রাজনীতি নানা প্রেক্ষাপটে বিদেশিদের সমর্থন ছাড়া সরকার পতন সম্ভব নয় বলেন মনে করেন তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই বিএনপি আন্দোলনের সফলতা দেখতে চায়। এ ক্ষেত্রে দলের নেতাদের যুক্তি হলো, তফশিল ঘোষণার পর ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। তখন অনেক দল সরকারের নানা প্রলোভনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে নেতাকর্মীর মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়।
দলের নেতারা জানান, মহাসমাবেশের মাধ্যমেই এক দফার ফয়সালার জন্য রাজপথকেই বেছে নিতে চান তারা। এজন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে আরও বড় ধরনের কর্মসূচিতে যাবে দলটি। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে না গেলেও একই রকম প্রভাব ফেলে এমন শান্তিপূর্ণ কিন্তু বড় পরিসরে কর্মসূচি নিয়ে চিন্তা করছেন তারা। তবে সরকার যদি অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ করে, উসকানি সৃষ্টি করে এবং ব্যাপক আকারে ক্ষতির সৃষ্টি করে তাহলে কৌশলে তা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপির সূত্রমতে, দলের নেতৃত্ব এবার ঢাকায় বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে কয়েক মাস ধরেই দলকে নানাভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত এক মাস অন্য সব কর্মসূচির মধ্যেই রুদ্ধদ্বার বিভাগীয় বৈঠক করেছেন। যেখানে বিগত নির্বাচনের প্রার্থীরা ছাড়াও জেলার শীর্ষ নেতারা ছিলেন। এসব বৈঠকে প্রতিটি জেলা থেকে ঢাকার কর্মসূচিতে লোক সমাগম ঘটানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ভাবনা অনুযায়ী, ঢাকায় লাগাতার বৃহৎ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যেতে চান। এজন্য প্রতিটি কর্মসূচিতে ব্যাপকহারে জনসমাগমও ঘটানো হবে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মী পথে পথে নেতাকর্মীকে বাধা দিতে পারে। এজন্য কর্মসূচির দু-একদিন আগেই দূর-দূরান্তের জেলার নেতাকর্মীকে আগে আগে ঢাকায় আসতে বলা হচ্ছে।
দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হঠাৎ ঢাকায় মহাসমাবেশে ডাকার পেছনে একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, আন্দোলনের গতি চূড়ায় তোলা। এজন্য পদযাত্রা কর্মসূচির পরপরই মহাসমাবেশ ঘোষণা করা হয়েছে। অতীতে ঢাকায় যত মহাসমাবেশ হয়েছে তার আগে সরকারের বাধার কারণে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, সরকারের টানা ১৪ বছরের শাসনামলে রাজধানীতে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ার পেছনে এটি একটা বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এবার ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে। মহাসমাবেশের পরও ঢাকার বাইর থেকে আসা নেতাকর্মীকে নিয়ে টানা কয়েকটি কর্মসূচি পালনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে মাঠ কর্মসূচি দেওয়াকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু কয়েক মাসে বিএনপির আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সেই কৌশল তেমন সফল হয়নি। কারণ তাদের সব কর্মসূচি সফল হয়েছে, সেভাবে বাধা আসেনি। বাধা এলে প্রতিরোধও হয়েছে। ভিসা নীতি চালু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবারের আন্দোলনে সরকার বাধা দিতে পারছে না।