DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৮শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৮শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

দায়িত্বশীলদেরও কঠোর বার্তা দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড

Astha Desk
আগস্ট ৯, ২০২৩ ১:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দায়িত্বশীলদেরও কঠোর বার্তা দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। সুস্থ ছাত্রদল সভাপতিকে অসুস্থ বলে বিদায়, বিএনপিতে নানা গুঞ্জন

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগের দাবিতে একদফা আন্দোলনকে দ্রুতই চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতা ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে দলটিতে। একই সঙ্গে আন্দোলনে যথাযথ ভূমিকা না রাখা দায়িত্বশীলদেরও কঠোর বার্তা দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। গতকাল মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া তারই অংশ। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।

বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রাবণের অসুস্থতার কারণ দেখানো হলেও নেতাকর্মীদের দাবি শ্রাবণ সুস্থ আছেন। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দিনও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন তিনি। তাকে অন্য কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির একাধিক দলীয় সূত্রও বলছে একই কথা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে নির্ধারিত স্পটে ছিলেন না শ্রাবণ। এছাড়া বেশকিছু ইস্যুতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ছাত্রদল সভাপতির জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সংগঠনে কোন্দল জিইয়ে রাখা, আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফোনে তাকে না পাওয়া। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে মাথায় নিয়ে শ্রবণের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য বিএনপির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে নিজের মানসিক অবস্থা ভালো নয় বলে শীর্ষ নেতাকে জানিয়েছিলেন শ্রাবণ। সে সময় বিশ্রাম প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে অবস্থান কর্মসূচিতে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার বিষয়টি।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল জানিয়েছেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্বে অবহেলা করেছেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তাই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নেতারা জানান, ওই দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা এলাকায় থাকার কথা ছিল শ্রাবণের। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সেখানে যাননি। বিকেলের দিকে তিনি খিলক্ষেত এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন।

বিএনপির একজন মহানগরের নেতা বলেন, অবস্থান কর্মসূচির দিন নেতাদের এলাকা ভাগ করা ছিল। শ্রাবণকেও একটি এলাকা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সকাল সকাল হাজির হলেও দিনভর পাওয়া যায়নি শ্রাবণকে। ফোন করা হলে বারবারই বলেছে আসতেছি। তাদের মতে ছাত্রদল সভাপতি স্পটে গেলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। কারণ তার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে অনেক নেতাকর্মী যেত। বিকেলে দায় এড়াতে ঝটিকা মিছিল করে ফেসবুকে দিয়েছেন।

অন্যদিকে গত ২ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় নয়াপল্টনে তাৎক্ষণিক বড় শোডাউন করে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। সেখানে সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি দলের হাইকমান্ড।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের অভূতপূর্ব উপস্থিতির পরদিন অবস্থান কর্মসূচি ঠিকমতো পালন করা গেলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যেত পারত। ঢাকার প্রবেশ পথের প্রতিটি পয়েন্টে ২৫ থেকে ৩০ হাজার নেতাকর্মী জড়ো করা অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু সাংগঠনিক ব্যর্থতা ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতায় কর্মসূচি সেই অর্থে জোরালো হয়নি। বিষয়টি মাঠের কর্মীদের মনোবলে আঘাত হেনেছে। আন্দোলনেও একরকম ছন্দপতন হয়েছে। এজন্য আন্দোলনে দায়িত্বশীলদের সক্রিয় থাকা নিয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। ছাত্রদল সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।

আরো পড়ুন :  উত্তরবঙ্গের অভাব ঘুচবে আবু সাঈদের কারণে : আসিফ মাহমুদ

এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঢাকায় কর্মসূচি নিয়ে সার্বিক প্রতিবেদন তৈরি করছেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রদলের একটি অংশ মনে করছে, সভাপতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী গ্রুপ লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের কান ভারী করছে। এজন্য তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আন্দোলনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ‘আমার শ্রবণ’ বলে সম্বোধন করেন তাকে সরানো শুধু অবস্থান কর্মসূচির ঘটনা বলে মনে করি না। যে সিন্ডিকেট অনেক দিন ধরে তাকে সরাতে চেয়েছিল তারা কান ভারী করায় এমনটা হয়েছে। এতে একপক্ষ চাঙা হলেও আরেক পক্ষ নিষ্ক্রিয় হবে।

কে এই শ্রাবণ? ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি হয়। এরপরই শুরু হয় নানান আালোচনা-সমালোচনা। এর অন্যতম কারণ শ্রাবণের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। সবাই পদধারী নেতাও। রওনাকুল ইসলামের বাবা ও এক ভাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও।

দেড় যুগ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার ছেলে শ্রাবণ। ২০০৩ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাবির বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। পরিবারের দেওয়া তথ্যমতে বিপরীত মেরুর রাজনীতির কারণে শ্রাবণ এক যুগেরও বেশি সময় বাড়ি যাননি।

জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম শ্রাবণের বাবা। তিনি এখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান। সবশেষ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলেও পরে দল তাকে আবার ফিরিয়ে নেয়।

রওনাকুলের বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত।

আরেক ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর ছোট ভাই আযাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।

অবশ্য শ্রাবণ ছাত্রদলের পদ পাওয়ার পর এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্য ছিল, গণতান্ত্রিক দেশে থাকতেই পারে যে বাবা একটা রাজনীতি করবেন, ছেলে আরেকটা রাজনীতি করবে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০