আদিলুর ও এলানের কারাদণ্ডের রায় বাতিল চেয়ে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
আইসিটি আইনে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে দুই বছর কারাদণ্ডের রায় বাতিল চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা) ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রস্তাবনার ওপর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। পরে পার্লামেন্টে প্রস্তাবনাটি গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এমপিরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা এনজিও, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের কথা স্মরণ রেখে সরকারকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে যেন, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন সহজে বিদেশি অনুদান লাভ করতে পারে।
‘অধিকার’-এর দুই নেতা—আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানের কারাদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের রায় বাতিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইইউ এমপিরা। রায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশের ইবিএ সুবিধা পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
এর আগে গত বুধবার রাতে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে ওই প্রস্তাবনার ওপর আলোচনা ও বিতর্ক করেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ছয় সদস্য।
মোশন ফর অ্যা রেজ্যুলেশন’ শিরোনামে ওই প্রস্তাবনায় ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি নিরাপদ এবং অনুকূল কাজের অবস্থা নিশ্চিত করার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে ওই রেজ্যুলেশনে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা এবং শ্রমিকদের অধিকারের মতো বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে বলে মত দেওয়া হয়েছে ওই রেজ্যুলেশনে।
এ অবস্থায় শিগগির এবং কোনো শর্ত ছাড়া মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং সংস্থাটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিদেশি অনুদানের ব্যবহার সহজতর করতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রোধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে সাইবার নিরাপত্তা আইন গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এতে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে সর্বোচ্চ উদ্বেগ প্রকাশ করতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থানীয় মানবাধিকার রক্ষক, ইউনিয়ন কর্মী এবং হামলার শিকার সাংবাদিকদের প্রতি তাদের সমর্থন বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।