ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সবার লাশ উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ইরানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ অন্যদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় অনুসন্ধান অভিযানও শেষ হয়েছে। ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পির হোসেইন কোলিবান্দ আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইরানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পির হোসেইন কোলিবান্দ দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে জানান, দুর্ঘটনায় শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের লাশ ইরানের উত্তর-পশ্চিমের তাবরিজ শহরে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। এ সময় হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় অনুসন্ধান অভিযান শেষ হয়েছে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
গতকাল রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটে। হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ দেশটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব আরোহী নিহত হয়েছেন বলে আজ দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজও একই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বার্তা সংস্থাটি এ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ‘শহীদ’ বলে অভিহিত করে। ইরানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল।
এদিকে ৫০ দিনের মধ্যেই সংবিধান অনুসারে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক পদাধিকারীদের নিয়ে গঠিত অভিভাবক পরিষদ, যা ফারসি ভাষায় শুরায়ে নিগাহবন নামে পরিচিত—এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিভাবক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ জানিয়েছেন, খুব শিগগির ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার, বিচার বিভাগের প্রধান এবং পরিষদের অন্যান্য সদস্য মিলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।
এর আগে, আজ সোমবার সকালে ইরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইব্রাহিম রাইসি ও আমির আবদুল্লাহিয়ানের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তার আগে, গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণের সময় আছড়ে পড়ে হেলিকপ্টারটি। ওই হেলিকপ্টারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি, তাবরিজের জুমার নামাজের খতিব হোজ্জাতোলেস্লাম আল হাশেম এবং আরও কয়েকজন আরোহী ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু বদলে দিতে পারে ইরানের শাসন কাঠামো প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু বদলে দিতে পারে ইরানের শাসন কাঠামো
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ায় দেশটিতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আর তা কাটিয়ে উঠতেই দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্তর্র্বতী দায়িত্ব নেবেন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুখবার।
ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি সংবিধান অনুসারে কোনো কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দেশটির সরকারপ্রধান তথা প্রেসিডেন্টের পদ শূন্য হলে সেই পদে অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট। মোহাম্মদ মুখবার বর্তমানে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর শাসনামলে চীন, রাশিয়া, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করে তেহরান। ইসরায়েলে আলোচিত ইরানি হামলার সময়ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।