রাসেলস ভাইপার মারলে পুরস্কার, আইনের পরিপন্থী-বলছে বনবিভাগ
আস্থা ডেস্কঃ
ফরিদপুরে আইন অমান্য করে প্রতিটি রাসেলস ভাইপার সাপ (চন্দ্রবোড়া) মারার বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ ইশতিয়াক আরিফ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জেলা কার্যনির্বাহী কমিটির প্রস্তুতি সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। তবে এ ধরনের ঘোষণা ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থী এবং দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
শাহ মোঃ ইশতিয়াক আরিফের ওই বক্তব্যের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বক্তব্যে শাহ মোঃ ইশতিয়াক বলেন, ফরিদপুরের কোতোয়ালি (সদর উপজেলা) এলাকায় কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারেন, তাহলে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ঘোষণা দেওয়ার সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ঝর্ণা হাসানের এক প্রশ্নের জবাবে ইশতিয়াক বলেন, ‘প্রতিটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে। যত খুশি সাপ মারা যাবে। প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।’
পুরস্কার অর্থায়ন সম্পর্কে ইশতিয়াক আরও বলেন, ‘ভয়ংকর সাপটির কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এ টাকা দেওয়া হবে।’ ওই অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকও উপস্থিত ছিলেন।
ওই ঘোষণা যখন দেওয়া হয়, তখন এ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে আমার জানা ছিল না । তাছাড়া ওই সভা কোনো পাবলিক জনসভা ছিল না; ছিল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির ঘরোয়া সমাবেশ। তবে আমরা এর ব্যাখ্যা দিয়ে একটা প্রেস রিলিজ দেব; যাতে বলা হবে রাসেলস ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরে বন বিভাগের কাছে সোপর্দ করলে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
শাহ মোঃ ইশতিয়াক, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
যেকোনো বন্য প্রাণী নিধন আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানান ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া। আজ শুক্রবার সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটির দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০ থেকে ৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সব কটি বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে এবং ব্যাঙ, ইঁদুর খেয়ে বাঁচে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কুদ্দুস ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘ওই বক্তব্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ যদি রাসেলস ভাইপার ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়, তবে এ দায় কে নেবে? বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখুন, সাপের কামড়ে কতজন মারা গেছেন? উল্লেখযোগ্য কোনো সংখ্যা পাওয়া যাবে না। এর চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেক বেশি লোক মারা যান।
বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাহ মোঃ ইশতিয়াক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘোষণা যখন দেওয়া তখন এ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে আমার জানা ছিল না । তাছাড়া ওই সভা কোনো পাবলিক জনসভা ছিল না; ছিল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির ঘরোয়া সমাবেশ। তবে আমরা এর ব্যাখ্যা দিয়ে একটা প্রেস রিলিজ দেব, যাতে বলা হবে রাসেল ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরে বন বিভাগের কাছে সোপর্দ করলে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।