কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের বিরুদ্ধে পর্নগ্রাফি আইনে আদালতে মামলা করেছে তার ভাগ্নে নাজমুল হোসেন হীরার স্ত্রী মিতু আক্তার।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে কিশোরগঞ্জের এক নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ে করা হয়। মিতু আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর গ্রামের মো. কামরুল হাসান মিলনের মেয়ে। মিতু কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ওই নারী মামলায় প্রধান আসামি করেছে তার স্বামী কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেন হীরাকে। এছাড়া তার মামা শ্বশুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে।
মামলার এজহার সূত্রে জানাযায়, ভুক্তভোগী নারী ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়াপ্রবাসী এক যুবককে বিয়ে করেন। কিন্তু ‘মাদকাসক্ত’ হওয়ায় একমাসের মধ্যে স্বামীকে তালাক দেন তিনি। এদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের ভাগনে হীরা তার কলেজে যাওয়া আসার পথে ভুক্তভোগীকে প্রেমের প্রস্তাব ও হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী হীরার প্রস্তাব মেনে নেন। বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কও করেন তারা। হীরা এসবের ভিডিও এবং স্থির চিত্র ধারণ করে রাখে। পরে ভুক্তভোগী বিয়ের জন্য চাপ দিলে গত বছর ৮ জুন কাজী অফিসে নিবন্ধনের মাধ্যমে বিয়ে করেন। পরে ভুক্তভোগী নারী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন হীরা বিবাহিত। প্রথম স্ত্রী সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাদের দুটি সন্তান হয়েছিল, মারা গেছে। হীরা তার বাসায় প্রায়ই বিভিন্ন মেয়েকে নিয়ে এসে শারীরিক মেলামেশা করতেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী হীরাকে মৌখিক তালাক দিয়ে চলে যান। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আবার মেলামেশায় বাধ্য করা হয়। পরে আবারও এসবের ভিডিও দৃশ্য ধারণ করে। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুলের কাছে অভিযোগ করলে তারা উল্টো হুমকি দেয় কিশোরগঞ্জ থাকাতে দিবে না।
ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন বলেন, তার ভাগনের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করলে কিশোরগঞ্জে থাকতে দেওয়া হবে না। এদিকে হীরা ‘আপত্তিকর’ ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৫ লাখ টাকা নেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনও একাধিক দামি মোবাইল ফোন আদায় নেন। সুমনের বড়ভাই বাবুলও তিন লাখ টাকা নেন। এর পরও তারা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন। ভুক্তভোগী নিজেও তা দেখেছেন। এর পরই তিনি মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী নারী এ ঘটনায় সদর থানায় একাধিকবার মামলা করতে গেলেও ওসি মামলা নেয়নি। পরে আজ তিনি কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আশিকুর রহমানের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত সদর থানাকে মামলাটি এফআইআর এর নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি মহল রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমার এবং আমার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে লেগে গেছে। আমার জানা মতে আমার ভাগ্নে ওই নারীকে বিয়ে করেছিল।’
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় অবৈধ চিনি চোরাচালানের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।