পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক রফিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে শোকজ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া রাসেলকে এখন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলীয় সভাপতি ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
এদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভার আগে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় সাংবাদিকরা রফিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে অভিযুক্ত রাসেলকে শোকজ করতে নির্দেশ দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ইতোপূর্বেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে, সে (রাসেল) আমার নাম ব্যবহার করেও নাকি অপকর্ম করছে।
রাসেলের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায়। এক সময় ছাত্রদলের সঙ্গে চলাফেরা করা রাসেল এলাকায় ছাত্রলীগ বা যুবলীগের রাজনীতি না করেই হঠাৎ করেই বড় ‘আওয়ামী লীগার’ বনে যায়। পার্টি অফিসে দু-চার জন কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রটোকল দেওয়া আর তাদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে নিজেকে বড় নেতা হিসাবে জাহির করতো রাসেল। ঢাকায় থাকলেও বাগিয়ে নেন জেলা আওয়ামী লীগের পদ। দলীয় পদ এবং গুরুত্বপূর্ন নেতাদের সঙ্গে তোলা এসব ছবি দেখিয়ে চলে তার তদবিরবাজি। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের পদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের মনোনয়ন ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে রাসেলের বিরুদ্ধে।
রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার উদ্বেগ: এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক এবং রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার (আরডিজেএডি) সদস্য রফিকুল ইসলামের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আরডিজেএডি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক দীপক দেব এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীবব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সিসাস এর নিন্দা ও প্রতিবাদ: এদিকে এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা (সিসাস)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি তৈমুর ফারুক তুষার ও সাধারণ সম্পাদক কাওসার আজম বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এ ধরনের হামলা স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় অন্তরায়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের গৌরবময় ঐহিত্যের অধিকারী দল আওযামী লীগের কার্যালয়ে একজন সাংবাদিকের উপর হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। সিসাস নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক রফিকুলের উপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে যান রফিকুল ইসলাম। এসময় তার (সাংবাদিকের) ওপর অতর্কিত হামলা করে রাসেল এবং তার সঙ্গে থাকা ক্যাডার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। উপর্যুপরি কিল-ঘুষি দিতে থাকে তারা। পরে আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা এগিয়ে আসার পরে রাসেল তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সরে পরে। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানান।