পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থ ইউনিটে খাগড়াছড়ির সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নানের পদায়নের একটি আদেশ জারি হয়েছে। এ নিয়ে অধিদপ্তরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আব্দুল মান্নানের পদায়ন বাতিলের জন্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী দাবিও জানিয়েছেন।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, খাগড়াছড়িতে আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। শুধু তাই নয়, ২৮তম বিসিএসের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাস চক্রের আবেদ আলীর থেকে ৩০ লাখ টাকায় প্রশ্ন কেনারও অভিযোগ রয়েছে। এত অভিযোগের পরেও এই কর্মকর্তাকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বাজেট), অর্থ ইউনিটে তাকে পদায়ন করা হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ-সচিব শারমিন ইয়াসমিন সই করা এক প্রজ্ঞাপনে আব্দুল মান্নানকে এ পদায়ন করা হয়। এটা মোটেও কাম্য নয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ ও দুর্নীতি মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সঠিকতা আছে মর্মে তদন্ত কমিটি মন্তব্য করেছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ হতে চলতি বছরের গত ৬ মে উপ-সচিব উম্মে কুলসুম সই করা একটি পত্রও পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ-সচিব শারমিন ইয়াসমিন সই করা এক পত্র জারি করা হয়। সেখানে ২৮তম বিসিএস এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাস চক্রের আবেদ আলীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকায় প্রশ্ন কিনে বিসিএসে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে অবৈধ নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে তদন্ত-সাপেক্ষে প্রতি-বেদন পাঠানোর জন্য বলা হয়। এরপরেও চলতি মাসের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ-সচিব শারমিন ইয়াসমিন সই করা প্রজ্ঞাপনে আব্দুল মান্নানকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সহকারী পরিচালক (বাজেট), অর্থ ইউনিটে পদায়নের আদেশ জারি করা হয়েছে।
এই প্রজ্ঞাপনের পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের প্রশাসন ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী আব্দুল মান্নানের পদায়নের আদেশ বাতিল করার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকের (প্রশাসন) সাথে দেখা করে দাবি জানান।
এসময় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে পদায়ন না করার জন্যও আল্টিমেটাম দেন। অধিদপ্তরের সিনিয়র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রণালয় যেখানে তার দুর্নীতি তদন্তের জন্য ২ (দুই) বার পত্র দিয়েছে সেখানে তারাই আবার তাকে গুরুত্বপ‚র্ণ পদে পদায়ন করেছে। এ ধরনের আদেশ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের শামিল। কে এই আব্দুল মান্নান? ২৮ তম বিসিএস এ যোগদানকৃত এই কর্মকর্তা বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ের সুবিধাভোগী হিসেবেই অধিদপ্তরে চিহ্নিত। মাগুরা জেলার অধিবাসী এই কর্মকর্তা মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন এমপি সাইফুজ্জামান শেখরের অশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পার-১) হিসেবে পদোন্নতি না পেয়েও পোস্টিং নেন। পরবর্তীতে সবাইকে অবাক করে ১১ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে রহিত করে পদোন্নতি নেন। পদোন্নতির পর প্রশাসন ইউনিটেই সহকারী পরিচালক (পার-১) হিসেবে পোস্টিং নেন। এভাবে সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করে পদোন্নতি এবং পোস্টিং করানোর ক্ষেত্রে এই বিভাগের একজন উপ-সচিব জড়িত ছিলেন মর্মে মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগও করা হয় যা তদন্তের জন্য আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসন ইউনিটে থাকাকালে অবৈধ নিয়োগ, বদলী বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনীত একাধিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী যথাক্রমে ‘‘অসদাচরণ ও দুর্নীতি’’ মামলা রুজু করার জন্য তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন থাকায় অবস্থায় তাকে আবারো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করায় অধিদপ্তরে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে একটি চক্র রয়েছে যারা কোনো ভালো মানুষকে কাজ করতে দিতে চায় না তারাই মূলত আমার পদায়নের আদেশ জারি হওয়ার পর থেকে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এসবের কোনো ভিত্তি নেই।