ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo খাগড়াছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে ঢাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল Logo একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি! Logo খাগড়াছড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ Logo সামনে ঘোর অন্ধকার-আমরা ঘুমাচ্ছি Logo খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বাষিকী পালিত Logo কিশোরগঞ্জে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল Logo হোসেনপুরে পুলিশের হাত থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল বিএনপি নেতারা Logo কিশোরগঞ্জ শহরে অটোরিকশার যানজট ও ফুটপাত দখল ভাঙতে মাঠে নামলেন ডিসি ফৌজিয়া খান Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে প্রবাস থেকে শোক প্রকাশ করলেন সেলিম রেজা

নওগাঁয় কাফনের কাপড় গায়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ০৪:৩১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • / ১০৮০ বার পড়া হয়েছে

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ৩০% কোটা বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন।

শনিবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টায় পর্ব মধ্য পরীক্ষা বর্জন করে তারা শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে মুক্তির মোড়ে প্রতীকী ‘মৃত্যুর’ প্রতিবাদ জানান এবং দাবি আদায়ে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রাস্তার ওপর শুয়ে পড়েন। এতে পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনুল আবেদীন, সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী ও দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরে ইউএনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিলে ঐদিনের জন্য অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া নন-টেকনিক্যাল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে পদোন্নতির রায় বাতিল করতে হবে।

তাদের অভিযোগ- নন-টেকনিক্যালদের এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলে কারিগরি শিক্ষার মান নষ্ট হবে এবং প্রকৃত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ সংকুচিত হবে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চার বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করি। অথচ আমাদের জন্য নির্ধারিত পদ কমিয়ে নন-টেকনিক্যালদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। যদি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তাহলে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এইচএসসি পাস করেই যদি শিক্ষক হওয়া যায়, তাহলে আমাদের এত কষ্ট করে ডিপ্লোমা করার দরকার কী? আমাদের বাবা-মা হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন, অথচ চাকরি পাবেন তারা, যারা প্রকৃত কারিগরি শিক্ষা নেননি।” বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ বাতিল করে এই পদ শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি, উপসহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তারা চান, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ চার বছর বহাল রেখে প্রতিটি সেমিস্টারের সময়সীমা ছয় মাস নির্ধারণ করা হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে সংস্কার করে একে পুরোপুরি কারিগরি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করতে হবে, যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয় এবং দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক সংকট দ্রুত দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে তারা প্রস্তাবিত চারটি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ আসন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মো. মোত্তাকিনুল আলম বলেন, “আমাদের দাবি মানা না হলে, প্রয়োজনে আমরা ঢাকায় লংমার্চ করবো। আমাদের পেছনে আমাদের পরিবার ও ভবিষ্যৎ রয়েছে, তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়বো।”

প্রশাসনের আশ্বাস পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছেন, তবে তারা সতর্ক করেছেন যে যদি দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আরও বড় কর্মসূচির মাধ্যমে তারা রাস্তায় নামবেন।

ট্যাগস :

নওগাঁয় কাফনের কাপড় গায়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

আপডেট সময় : ০৪:৩১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ৩০% কোটা বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন।

শনিবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টায় পর্ব মধ্য পরীক্ষা বর্জন করে তারা শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে মুক্তির মোড়ে প্রতীকী ‘মৃত্যুর’ প্রতিবাদ জানান এবং দাবি আদায়ে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রাস্তার ওপর শুয়ে পড়েন। এতে পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনুল আবেদীন, সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী ও দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরে ইউএনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিলে ঐদিনের জন্য অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া নন-টেকনিক্যাল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে পদোন্নতির রায় বাতিল করতে হবে।

তাদের অভিযোগ- নন-টেকনিক্যালদের এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলে কারিগরি শিক্ষার মান নষ্ট হবে এবং প্রকৃত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ সংকুচিত হবে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চার বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করি। অথচ আমাদের জন্য নির্ধারিত পদ কমিয়ে নন-টেকনিক্যালদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। যদি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তাহলে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এইচএসসি পাস করেই যদি শিক্ষক হওয়া যায়, তাহলে আমাদের এত কষ্ট করে ডিপ্লোমা করার দরকার কী? আমাদের বাবা-মা হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন, অথচ চাকরি পাবেন তারা, যারা প্রকৃত কারিগরি শিক্ষা নেননি।” বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ বাতিল করে এই পদ শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি, উপসহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তারা চান, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ চার বছর বহাল রেখে প্রতিটি সেমিস্টারের সময়সীমা ছয় মাস নির্ধারণ করা হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে সংস্কার করে একে পুরোপুরি কারিগরি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করতে হবে, যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয় এবং দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক সংকট দ্রুত দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে তারা প্রস্তাবিত চারটি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ আসন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মো. মোত্তাকিনুল আলম বলেন, “আমাদের দাবি মানা না হলে, প্রয়োজনে আমরা ঢাকায় লংমার্চ করবো। আমাদের পেছনে আমাদের পরিবার ও ভবিষ্যৎ রয়েছে, তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়বো।”

প্রশাসনের আশ্বাস পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছেন, তবে তারা সতর্ক করেছেন যে যদি দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আরও বড় কর্মসূচির মাধ্যমে তারা রাস্তায় নামবেন।