আওয়ামী লীগ না থাকায় সরব বিএনপিসহ অন্যান্য দল
কিশোরগঞ্জ ছয় আসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
- আপডেট সময় : ১২:২৬:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৮৫১ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের ছয় আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সর্বাধিক হলেও ইসলামী দলগুলো এবার ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটাররাও অপেক্ষায় আছেন পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের অধিকার প্রয়োগের। এ অবস্থায় মাঠে নেমেছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। প্রতিটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ–০১ (সদর–হোসেনপুর)
এই আসনে গণসংযোগ, মতবিনিময় ও সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডে দেখা মিলছে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল ও সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী, সহ-সভাপতি রুহুল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহ রাব্বানী, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসরাঈল মিঞা, ব্যারিস্টার আতিকুর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র আবু তাহের মিয়া ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুক।
অপর দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলার সাবেক নায়েবে আমীর ও বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোসাদ্দেক ভূঁইয়াকে আগামী নির্বাচন উপলক্ষে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নিয়মিত গণসংযোগ করছেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী করেছে প্রফেসর আজিজুর রহমান জার্মানি, এ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী শায়খুল হাদিস মাওলানা হিফজুর রহমান খান। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ জামীকে। এই আসনে এনসিপি এখনও কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে আসছেন। এ সংগ্রামের মূল লক্ষ্য তরুণ ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আর কোনো ঘুষখোর, চাঁদাবাজ বা দখলবাজকে তাদের নেতা বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেনে নেবে না। সোহেল প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, নির্বাচিত হলে প্রতিটি এলাকায় চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ সব ধরনের অপরাধ শক্ত হাতে দমন করবেন।
কিশোরগঞ্জ–২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া)
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন, সহ-সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন, পাকুন্দিয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আহমদ ফারুক খোকন, যুবদলের সাবেক কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খাঁন দিলীপ। এ ছাড়াও মোশাহিদ আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সদস্য রেজাউল করিম বজলু মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ করতে দেখা গেছে।
অপর দিকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল। এছাড়া খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা ছাঈদ আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা রশীদ আহমদ জাহাঙ্গীর হোছাইনী ।
কিশোরগঞ্জ–৩ (করিমগঞ্জ–তাড়াইল)
এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম ওসমান ফারুক মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তার অনুসারীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস ও জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন ।
অপর দিকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কর্নেল (অব.) প্রফেসর অধ্যাপক ডা. জেহাদ খান। ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আলমগীর হোসাইন তালুকদার প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী প্রভাষক আতাউর রহমান শাহান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শায়খুল হাদীস মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
কিশোরগঞ্জ–৪ (ইটনা–মিঠামইন–অষ্টগ্রাম)
এই আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- সাবেক জেলা প্রশাসক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মোল্লা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন, দলের নেতা ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী লাকী, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি সুরঞ্জন ঘোষ, সাবেক উপ-সচিব জহির উদ্দিন ভূইয়া, বুয়েটের সাবেক ছাত্রদল নেতা নেসার আহমেদ।
এ আসনের জামায়াতের প্রার্থী ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর শাখার আইন বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ মো. রোকন রেজা। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা অলিউর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের বিল্লাল আহমেদ মজুমদার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শায়খ মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম।
কিশোরগঞ্জ–৫ (বাজিতপুর–নিকলী)
এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল এবং সাবেক পৌর মেয়র এহসান কুফিয়া, প্রবীণ নেতা মীর মোহাম্মদ জলিল হোসেন, অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, শফিকুল আলম রাজন, কেন্দ্রীয় কৃষকদল নেতা হাজী মাসুক মিয়া, সাবেক এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ বদরুল আলম শিপু, সাবেক সচিব আব্দুল ওয়াহাব এ আসনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আসনটিতে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সহযোগিতা করার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপি চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকেও সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতারা।
এই আসনে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ রমজান আলীর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এই আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আহাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন নূরী। এছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
জামায়াতের প্রার্থী রমজান আলী বলেন, ৬টি আসনেই আমাদের প্রার্থীরা মানুষের কাছে যাচ্ছেন। প্রতিটি এলাকায় আমরা সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ সুযোগ দিলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসমুক্ত সুন্দর এলাকা গড়ে তুলব। আমরা আশাবাদী ফলাফল ভালো হবে।
কিশোরগঞ্জ–৬ (ভৈরব–কুলিয়ারচর)
এই আসনে দল গোছানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গণসংযোগ, মতবিনিময় ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শরীফুল আলম। নিজ নির্বাচনি এলাকা ছাড়াও পুরো জেলায়ই সক্রিয় তিনি। এ আসনে বিএনপির আর কোনো প্রার্থী না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা ও ভৈরব উপজেলা আমীর মাওলানা মোহাম্মদ কবীর হোসাইন। আগামী নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী প্রিন্সিপাল মাওলানা লাইস উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেল, ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ মুছা খান।
শরীফুল আলম বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দল। বর্তমান বিএনপি যে কোনো সময়ের চেয়ে গোছানো এবং শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সর্বশেষ দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে আমি মনে করি। সেই সঙ্গে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করবে।




















