ঢাকা ০৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo ভারতে আবারও যুক্ত হতে পারে সিন্ধু: রাজনাথ সিং Logo পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক অসহায় দুঃস্থ ও গরীবদের মাঝে সহায়তা প্রদান Logo খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo মানবতাবিরোধী অপরাধ : ট্রাইব্যুনালে ১৩ সেনা কর্মকর্তা Logo ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ Logo প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তাইজুলের ২৫০ Logo যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৪ Logo কিশোরগঞ্জে মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কুরআন বিতরণ Logo মূকাভিনয়ে কৃতিত্ব রাখায় রিফাত ইসলামকে সম্মাননা প্রদান Logo বাজিতপুরে সৈয়দ এহসানুল হুদার কর্মী-সমর্থকদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা

ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০৫:২২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১২২৫ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ময়মনসিংহ নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকায় ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।

৬ অগাস্ট পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি প্রতিনিধি দল ১৬৯৯ সালে নির্মিত প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটি পরিদর্শন করেন এবং তা দ্রুত সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন।

গত সোমবার দুপুরে মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুদ্রণযন্ত্রটির দুটি অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছাপাখানার জায়গাটিও অরক্ষিত। তবে ছাপাখানাটি কবে বন্ধ হয়েছে স্থানীয়রা সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।

মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডের চা দোকানি সুশীল চন্দ্র দে বলেন, ১৯৯৭ সালে বাবার হাত ধরে সাথে ময়মনসিংহ আসি। তখন থেকেই মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে বসবাস করছি। শুরুতে ২০ টাকা দিয়ে বাবা আর আমি বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করি। এখন আমার বাসা ভাড়া আট হাজার।
“১৯৯৭ সালে এসে দেখি মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে টিনের চৌচালায় ছাপাখানা চলছে। এর কয়েক মাস পর থেকে অবশ্য সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ছাপাখানার কয়েকশ গজ দূরে একটি পত্রিকা অফিস ছিল। সেটিও এখান বের হত।”

কবি শামসুল ফয়েজ বলেন, “ছাপাখানাটি থেকে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকা বের করতেন এ টি এম নুরুদ্দীন। সেখানে আমার যাওয়া-আসা ছিল। সেই ছাপাখানাটি ৩০-৩৫ বছর আগে ছিল। এরপর নুরুদ্দীন সাহেব মারা গেলে তার ছেলে-মেয়েরা আমেরিকায় স্থায়ী হয়। পরে আর পত্রিকা বের হয়নি। ছাপাখানাটিও বন্ধ হয়ে যায়।”

পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ইউরোপে ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুদ্রণ শিল্পের প্রসার ঘটে। বিশেষ করে ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান উদ্ভাবক জোহানেস গুটেনবার্গের ধাতব চলনশীল অক্ষর ব্যবহার করে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ছাপাখানার প্রসার ঘটে পর্তুগিজদের হাত ধরে ১৫৫৬ সালে গোয়ায় পর্তুগিজরা প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করে। এরপর ধীরে ধীরে এই প্রযুক্তি ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুদ্রণ শিল্প প্রসারিত হতে থাকে। যার প্রভাব প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহেও পড়ে।
ইমতিয়াজ বলেন, “এই মুদণযন্ত্রটি ১৬৯৯ সালে নির্মিত, যা মুদ্রণ শিল্পের অনন্য নিদর্শন। পূর্ব প্রজন্মের প্রগতিশীল মানুষদের হাত ধরে এই প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটির ময়মনসিংহে আগমন ঘটে।”

পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গবেষক স্বপন ধর বলেন, “গবেষণা করতে গিয়ে যে বিষয়টি পাওয়া গেছে, ১৮৬৬ সালের দিকে হরচন্দ্র চৌধুরী শেরপুর থেকে মুদ্রণযন্ত্রটি ময়মনসিংহে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর ১৯৪৭ সালে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অনাথ বন্ধু গুহ তার প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় সেই মুদ্রণযন্ত্রটি ব্যবহার করতেন।

“তিনি কয়েক বছর ব্যবহারের পর গফরগাঁওয়ের মাওলানা পাঁচবাগীর পীর সাহেবের হাতে ছাপাখানার দায়িত্ব চলে যায়; যা চলমান থাকে স্বাধীনতার পর পর্যন্ত। সেখান থেকে ‘চাষি পত্রিকা’সহ রাজনৈতিক পোস্টার ছাপানো হত।”

তিনি আরও বলেন, “সর্বশেষ ছাপাখানাটি কারা পরিচালনা করতেন তা বের করার কাজ চলছে। তবে আমরা চাই, যেহেতু মুদ্রণযন্ত্রটি পুরাকীর্তির নিদর্শনস্বরূপ। তা সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

ময়মনসিংহের স্থানীয় দৈনিক আজকের খবর পত্রিকার সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে ছাপাখানাটির নাম ছিল ‘চাষি ছাপাখানা’। সাপ্তাহিক চাষি পত্রিকাটিও সেখান থেকে প্রিন্ট করা হত। বিভিন্ন সময়ে ছাপাখানা হাত বদল হয়েছে। সবশেষ এ টি এম নুরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে ছিল ছাপাখানাটি।

আজ মঙ্গলরার ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রটি জাদুঘরে হস্থান্তর করা হয়েছে।

ট্যাগস :

ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান

আপডেট সময় : ০৫:২২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ময়মনসিংহ নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকায় ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।

৬ অগাস্ট পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি প্রতিনিধি দল ১৬৯৯ সালে নির্মিত প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটি পরিদর্শন করেন এবং তা দ্রুত সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন।

গত সোমবার দুপুরে মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুদ্রণযন্ত্রটির দুটি অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছাপাখানার জায়গাটিও অরক্ষিত। তবে ছাপাখানাটি কবে বন্ধ হয়েছে স্থানীয়রা সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।

মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডের চা দোকানি সুশীল চন্দ্র দে বলেন, ১৯৯৭ সালে বাবার হাত ধরে সাথে ময়মনসিংহ আসি। তখন থেকেই মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে বসবাস করছি। শুরুতে ২০ টাকা দিয়ে বাবা আর আমি বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করি। এখন আমার বাসা ভাড়া আট হাজার।
“১৯৯৭ সালে এসে দেখি মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে টিনের চৌচালায় ছাপাখানা চলছে। এর কয়েক মাস পর থেকে অবশ্য সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ছাপাখানার কয়েকশ গজ দূরে একটি পত্রিকা অফিস ছিল। সেটিও এখান বের হত।”

কবি শামসুল ফয়েজ বলেন, “ছাপাখানাটি থেকে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকা বের করতেন এ টি এম নুরুদ্দীন। সেখানে আমার যাওয়া-আসা ছিল। সেই ছাপাখানাটি ৩০-৩৫ বছর আগে ছিল। এরপর নুরুদ্দীন সাহেব মারা গেলে তার ছেলে-মেয়েরা আমেরিকায় স্থায়ী হয়। পরে আর পত্রিকা বের হয়নি। ছাপাখানাটিও বন্ধ হয়ে যায়।”

পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ইউরোপে ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুদ্রণ শিল্পের প্রসার ঘটে। বিশেষ করে ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান উদ্ভাবক জোহানেস গুটেনবার্গের ধাতব চলনশীল অক্ষর ব্যবহার করে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ছাপাখানার প্রসার ঘটে পর্তুগিজদের হাত ধরে ১৫৫৬ সালে গোয়ায় পর্তুগিজরা প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করে। এরপর ধীরে ধীরে এই প্রযুক্তি ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুদ্রণ শিল্প প্রসারিত হতে থাকে। যার প্রভাব প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহেও পড়ে।
ইমতিয়াজ বলেন, “এই মুদণযন্ত্রটি ১৬৯৯ সালে নির্মিত, যা মুদ্রণ শিল্পের অনন্য নিদর্শন। পূর্ব প্রজন্মের প্রগতিশীল মানুষদের হাত ধরে এই প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটির ময়মনসিংহে আগমন ঘটে।”

পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গবেষক স্বপন ধর বলেন, “গবেষণা করতে গিয়ে যে বিষয়টি পাওয়া গেছে, ১৮৬৬ সালের দিকে হরচন্দ্র চৌধুরী শেরপুর থেকে মুদ্রণযন্ত্রটি ময়মনসিংহে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর ১৯৪৭ সালে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অনাথ বন্ধু গুহ তার প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় সেই মুদ্রণযন্ত্রটি ব্যবহার করতেন।

“তিনি কয়েক বছর ব্যবহারের পর গফরগাঁওয়ের মাওলানা পাঁচবাগীর পীর সাহেবের হাতে ছাপাখানার দায়িত্ব চলে যায়; যা চলমান থাকে স্বাধীনতার পর পর্যন্ত। সেখান থেকে ‘চাষি পত্রিকা’সহ রাজনৈতিক পোস্টার ছাপানো হত।”

তিনি আরও বলেন, “সর্বশেষ ছাপাখানাটি কারা পরিচালনা করতেন তা বের করার কাজ চলছে। তবে আমরা চাই, যেহেতু মুদ্রণযন্ত্রটি পুরাকীর্তির নিদর্শনস্বরূপ। তা সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

ময়মনসিংহের স্থানীয় দৈনিক আজকের খবর পত্রিকার সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে ছাপাখানাটির নাম ছিল ‘চাষি ছাপাখানা’। সাপ্তাহিক চাষি পত্রিকাটিও সেখান থেকে প্রিন্ট করা হত। বিভিন্ন সময়ে ছাপাখানা হাত বদল হয়েছে। সবশেষ এ টি এম নুরুদ্দীনের তত্ত্বাবধানে ছিল ছাপাখানাটি।

আজ মঙ্গলরার ময়মনসিংহে ৩২৬ বছর আগের একটি মুদ্রণযন্ত্রটি জাদুঘরে হস্থান্তর করা হয়েছে।