চামেলীকে কেন্দ্র করে সৈয়দ নজরুল মেডিকেলে বাড়ছে অস্থিরতা!
- আপডেট সময় : ০৫:৫০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮৭১ বার পড়া হয়েছে
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল বানিয়াকান্দি গ্রামের সাধারণ সবজি ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলামের মেয়ে চামেলী আক্তার নানা কারণে বারবার আলোচনায় আসছেন। বাবার সামান্য ব্যবসা থাকলেও চামেলীর সাজপোশাক ও চলাফেরায় সবসময়ই ছিল রাজকীয় ছাপ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলজীবনের শেষ দিকে চামেলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কিশোরগঞ্জ শহরের নিউটাউন এলাকার এক ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে সঙ্গে। সম্পর্কটি শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় রূপ নিলে এলাকায় তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তবে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিষয়টি বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি হয়।
পরে কলেজজীবনে তিনি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন যশোদল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আল-আমিনের সঙ্গে। চামেলীর অভিযোগ ছিল, আল-আমিন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে আল-আমিন বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে সম্পর্কের ইতি ঘটে।
২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে হোসেনপুর উপজেলার মো. মোমেন মিয়ার সঙ্গে চামেলীর বিয়ে হয়। তবে বিবাহিত জীবনে স্থায়ী না হয়ে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। টিটুর প্রভাবেই চামেলী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি পান প্যাথলজি বিভাগের ক্যাশ কাউন্টারে।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চামেলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করে। রোগীদের কাছ থেকে ফি নিয়ে রশিদ না দেওয়া, হাসপাতালের মেশিন ব্যবহার করে পরীক্ষা করিয়ে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে হাসপাতালের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। এ ঘটনায় পলাশের সংসার ভেঙে যায়। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের কর্মচারী ও রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকারের সঙ্গে চামেলীর পরিচয় ঘটে। পরবর্তীতে তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয় এবং বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়।
গত, ৩১ আগস্ট চামেলী হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকারের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করলে বিষয়টি দেশব্যাপী আলোচনায় আসে।
তবে ডা. হেলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চামেলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। তাকে ডেকে সতর্ক করতে গেলে উল্টো আমাকে রাজনৈতিক প্রভাব দেখায় এবং হুমকি দেয়। কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ ও মামলা করেছে। তার কাছে প্রমাণ থাকলে এখনো প্রকাশ করছে না কেন? আমার শেষ কথা তার সম্পর্কে তার নিজ এলাকায় খোঁজ নিন। সে কেমন মহিলা এলাকাবাসী বলে দিবে। আমার কথা আপনাদের বিশ্বাস না ও হতে পারে।’’
এ বিষয়ে চামেলী আক্তারের স্বামী মো. মোমেন মিয়া বলেন, “আমি হোসেনপুর আমার বাড়িতে থাকি। আর চামেলী চাকরির সুবাধে বাবার বাড়িতে থাকে। কিন্তু এসব বিষয়ে সে আমাকে অবগত করেনি। আমি কিছু জানিনা। তার যা ইচ্ছে তা করুক!”
ঘটনার বিষয়ে কোনো প্রকার কথা বলতে রাজি হননি চামেলীর বাবা শফিকুল ইসলাম, তবে মা বলেন, ‘আমরা চামেলীকে বারবার না করেছি যে, ওই পরিচালকের পিছু নেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু চামেলী আমাদের কথা শুনেনি। পরিচালকের বিরোধী কিছু লোক তাকে কানপড়া দিচ্ছে। আর সেও তাদের দেখানো পথে হাঁটছে।‘
পরিচালক চামেলীর বাড়িতে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,‘পরিচালকের কোয়ার্টারের পিছনের আমাদের বাড়ি । পরিচালক প্রতিদিন সকালে হাঁটার জন্য আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটি ব্যবহার করত। একদিন চামেলী পরিচালককে দেখে খুব রিকুয়েষ্ট করেছে। কিন্তু পরিচালক ঘরে আসেনি বাড়ির উঠান থেকেই চলে গেছেন।’
এ বিষয়ের চামেলীর সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে জানা যায়, চামেলী পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপন আছে। তার পরিবার ও এলাকার কেউই বলতে পারেন না চামেলী কোথায় আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বানিয়াকান্দি গ্রামের একজন মহিলা বলেন, ‘চামেলী সুন্দরী বিধায় ছোট বেলা থেকেই তার বিভিন্ন ছেলেদের সাথে সম্পর্ক ছিল। চামেলীকে নিয়ে দেনদরবার নতুন কিছু না। এই মেয়ের দুইটা বিয়ে হয়েছে। বর্তমান যে জামাই সেটাও শুনছি জুয়া খেলে। আর পরিচালকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে আমরা ভিডিওটা দেখছি। ভিডিওতে সে নিজে ফেঁসে যাবে।’
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুজনের পক্ষ থেকেই আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আদালতের আদেশের কপি এখনও থানায় পৌঁছায়নি। কপি পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের মামলা দায়ের করে হাসপাতালকে অভিভাবকশূন্য করা হচ্ছে। আবার অনেকে দাবি করছেন, ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।




















