ঢাকা ০৬:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় শিক্ষক সমাজ

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ১১:১৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১২৭৬ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় শিক্ষক সমাজ। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিতের পথে বড় পদক্ষেপ।

মিয়া সুলেমান/ময়মনসিংহঃ

শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষের অবসান ঘটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে এমপিওভুক্ত বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ আর পরিচালনা কমিটির হাতে থাকবে না। বরং এই নিয়োগ হবে এনটিআরসিএ (NTRCA)–এর মাধ্যমে সুষ্ঠু পরীক্ষা ও যোগ্যতার যাচাইয়ের ভিত্তিতে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় বিদ্যমান অর্ডিন্যান্স ও প্রবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিদ্যমান নীতিমালা ও বিধি-বিধান পর্যালোচনা করে নতুন কাঠামো প্রণয়ন করবে। লক্ষ্য-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এ প্রক্রিয়া কার্যকর করা।

বর্তমানে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ হয়ে থাকে পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু এ পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, পক্ষপাতিত্ব, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাব এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে। এর ফলে অনেক সময় অযোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষকের আসনে বসছেন, আর যোগ্য শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

শিক্ষক মিয়া সুলেমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখনো ম্যানেজিং কমিটির হাতে। সেখানে যোগ্যতা নয়, অর্থ আর প্রভাবই মুখ্য হয়ে ওঠে। এনটিআরসিএ দায়িত্ব নিলে অন্তত একটা স্বচ্ছতার আশা ছিল, কিন্তু সেটাও থমকে গেছে।”

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহকারী প্রধান শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠন ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

শিক্ষা বিশ্লেষক আব্দুস সামাদ বলেন, “যখন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং ঘুষ, তদবির ও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ হয়, তখন শিক্ষক সমাজ হতাশ হয়। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়, যা রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির জন্যও বড় বাধা।”

এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মুক্তা জামান (সরাতী হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসায়-১১১৮১৫ কর্মরত) বলেন, “গণতন্ত্র মানে জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ নিয়োগগুলো যখন পক্ষপাতিত্বের কারণে জনগণের আশা বিফলে দেয়, তখন সেটি গণতান্ত্রিক চেতনারও পরিপন্থী।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগে শিক্ষক নিবন্ধনের মতোই একটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে এখানে অতিরিক্ত কিছু মানদণ্ড যুক্ত থাকবে-নেতৃত্বগুণ, প্রশাসনিক দক্ষতা, ব্যবস্থাপনা জ্ঞান, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, “আগে পরিচালনা কমিটি নিজেদের সুবিধা আদায় করতে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিত। কিন্তু এবার এনটিআরসিএ-এর সুপারিশে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।”

নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে। এর আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মিজানুর রহমান। এ কমিটিতে থাকবেন, এনটিআরসিএ প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাসহ মাদ্রাসা ও কারিগড়ি অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টজন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “কমিটি দ্রুত নীতিমালা তৈরি করবে। অনুমোদন হওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তখন থেকেই নতুন প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিনের অনিয়মের অবসান ঘটবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে যোগ্য নেতৃত্ব, শিক্ষক সমাজের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি হবে একটি অনুকূল পরিবেশ।

তারা একে শিক্ষা অঙ্গনের জন্য একটি যুগান্তকারী মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করছেন।

ট্যাগস :

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় শিক্ষক সমাজ

আপডেট সময় : ১১:১৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় শিক্ষক সমাজ। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিতের পথে বড় পদক্ষেপ।

মিয়া সুলেমান/ময়মনসিংহঃ

শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষের অবসান ঘটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে এমপিওভুক্ত বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ আর পরিচালনা কমিটির হাতে থাকবে না। বরং এই নিয়োগ হবে এনটিআরসিএ (NTRCA)–এর মাধ্যমে সুষ্ঠু পরীক্ষা ও যোগ্যতার যাচাইয়ের ভিত্তিতে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় বিদ্যমান অর্ডিন্যান্স ও প্রবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিদ্যমান নীতিমালা ও বিধি-বিধান পর্যালোচনা করে নতুন কাঠামো প্রণয়ন করবে। লক্ষ্য-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এ প্রক্রিয়া কার্যকর করা।

বর্তমানে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ হয়ে থাকে পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু এ পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, পক্ষপাতিত্ব, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাব এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে। এর ফলে অনেক সময় অযোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষকের আসনে বসছেন, আর যোগ্য শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

শিক্ষক মিয়া সুলেমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখনো ম্যানেজিং কমিটির হাতে। সেখানে যোগ্যতা নয়, অর্থ আর প্রভাবই মুখ্য হয়ে ওঠে। এনটিআরসিএ দায়িত্ব নিলে অন্তত একটা স্বচ্ছতার আশা ছিল, কিন্তু সেটাও থমকে গেছে।”

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহকারী প্রধান শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠন ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

শিক্ষা বিশ্লেষক আব্দুস সামাদ বলেন, “যখন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং ঘুষ, তদবির ও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ হয়, তখন শিক্ষক সমাজ হতাশ হয়। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়, যা রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির জন্যও বড় বাধা।”

এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মুক্তা জামান (সরাতী হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসায়-১১১৮১৫ কর্মরত) বলেন, “গণতন্ত্র মানে জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ নিয়োগগুলো যখন পক্ষপাতিত্বের কারণে জনগণের আশা বিফলে দেয়, তখন সেটি গণতান্ত্রিক চেতনারও পরিপন্থী।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগে শিক্ষক নিবন্ধনের মতোই একটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে এখানে অতিরিক্ত কিছু মানদণ্ড যুক্ত থাকবে-নেতৃত্বগুণ, প্রশাসনিক দক্ষতা, ব্যবস্থাপনা জ্ঞান, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, “আগে পরিচালনা কমিটি নিজেদের সুবিধা আদায় করতে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিত। কিন্তু এবার এনটিআরসিএ-এর সুপারিশে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।”

নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে। এর আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মিজানুর রহমান। এ কমিটিতে থাকবেন, এনটিআরসিএ প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাসহ মাদ্রাসা ও কারিগড়ি অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টজন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “কমিটি দ্রুত নীতিমালা তৈরি করবে। অনুমোদন হওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তখন থেকেই নতুন প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিনের অনিয়মের অবসান ঘটবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে যোগ্য নেতৃত্ব, শিক্ষক সমাজের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি হবে একটি অনুকূল পরিবেশ।

তারা একে শিক্ষা অঙ্গনের জন্য একটি যুগান্তকারী মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করছেন।