ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo ভারতে আবারও যুক্ত হতে পারে সিন্ধু: রাজনাথ সিং Logo পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক অসহায় দুঃস্থ ও গরীবদের মাঝে সহায়তা প্রদান Logo খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo মানবতাবিরোধী অপরাধ : ট্রাইব্যুনালে ১৩ সেনা কর্মকর্তা Logo ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ Logo প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তাইজুলের ২৫০ Logo যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৪ Logo কিশোরগঞ্জে মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কুরআন বিতরণ Logo মূকাভিনয়ে কৃতিত্ব রাখায় রিফাত ইসলামকে সম্মাননা প্রদান Logo বাজিতপুরে সৈয়দ এহসানুল হুদার কর্মী-সমর্থকদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা

ফিশারিতে বিষ প্রয়োগে ২০ লাখ টাকার মাছ নিধন

Doinik Astha
Doinik Astha
  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৭৮৮ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে ফিশারিতে বিষ প্রয়োগ করে অগনিত টাকার স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হয়েছে এক মৎস্যচাষীর। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ মারা গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী নাজমুল মিয়া।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দিবাগত রাত ১০টার দিকে উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সুন্দাইলপাড়া গ্রামে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নাজমুল জানান, প্রতিদিনের মতো সেদিনও তিনি মাছকে খাবার দিয়ে রাতে ঘুমাতে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দায়িত্বে থাকা কর্মচারী তাকে খবর দেন-পুকুরের মাছগুলো পানির ওপরে ভেসে উঠছে। খবর পেয়ে নাজমুল দ্রুত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে জানানোর চেষ্টা এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে অক্সিজেন প্রয়োগের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক শিং মাছ বাঁচানো যায়নি।

আক্ষেপে ভরা কণ্ঠে নাজমুল বলেন, “আমার দীর্ঘ দিনের ফিশারি অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এভাবে মাছ রক্ষা করতে না পেরে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। সব মাছ মরে গিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হলো। আমি এখন নিঃস্ব।”

এ বিস্তৃত পুকুরটিই ছিল নাজমুলের পরিবারের একমাত্র জীবিকার উৎস। দিন-রাতের শ্রম, আশা ও বিনিয়োগ ছিল এই মাছগুলোকে ঘিরে। তার চাচাতো ভাই একে এম জহিরুল ইসলাম আজাদি বলেন, “এই পুকুরে আমার ছোট ভাই নাজমুল কতটা পরিশ্রম করেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। যেন মাছ নয়, নিজের সন্তানকে লালন করেছে। আজ শুধু মাছই মারা যায়নি, মারা গেছে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ।”

বর্তমানে পুকুরের পানিতে কেবল মৃত মাছের ভেসে থাকা দেহ, নিস্তব্ধতা আর এক অসহায় মানুষের দুঃস্বপ্নই সাক্ষী হয়ে আছে। স্থানীয়দের ধারণা, অন্তত ১৫ লক্ষাধিক টাকার শিং মাছ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ করে নাজমুলের লাখো টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এতে এলাকার অন্যান্য মৎস্যচাষীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের ভাষ্য, “একটির পর একটি ফিশারিতে যদি বিষ প্রয়োগ করা হয়, তবে বছরের পর বছর শ্রম ও বিনিয়োগ এক রাতে ধ্বংস হয়ে যাবে।” অপর এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “এটি প্রতিহিংসামূলক ঘটনা। পূর্ব শত্রুতার জেরেই ফিশারিতে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে।” স্থানীয় বিএনপি নেতা হাদিস মিয়া বলেন, “শিং মাছের ফিশারিতে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ও এলাকাবাসী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আশা করছি, দ্রুত অপরাধীরা গ্রেপ্তার হবে।” ভুক্তভোগী নাজমুল মৌখিকভাবে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।

আঠারবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মহিউদ্দিন জানান, “এখনো পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এ ঘটনার পর স্থানীয় মৎস্যচাষী ও কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

ট্যাগস :

ফিশারিতে বিষ প্রয়োগে ২০ লাখ টাকার মাছ নিধন

আপডেট সময় : ০২:৩৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে ফিশারিতে বিষ প্রয়োগ করে অগনিত টাকার স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হয়েছে এক মৎস্যচাষীর। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ মারা গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী নাজমুল মিয়া।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দিবাগত রাত ১০টার দিকে উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সুন্দাইলপাড়া গ্রামে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নাজমুল জানান, প্রতিদিনের মতো সেদিনও তিনি মাছকে খাবার দিয়ে রাতে ঘুমাতে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দায়িত্বে থাকা কর্মচারী তাকে খবর দেন-পুকুরের মাছগুলো পানির ওপরে ভেসে উঠছে। খবর পেয়ে নাজমুল দ্রুত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে জানানোর চেষ্টা এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে অক্সিজেন প্রয়োগের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক শিং মাছ বাঁচানো যায়নি।

আক্ষেপে ভরা কণ্ঠে নাজমুল বলেন, “আমার দীর্ঘ দিনের ফিশারি অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এভাবে মাছ রক্ষা করতে না পেরে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। সব মাছ মরে গিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হলো। আমি এখন নিঃস্ব।”

এ বিস্তৃত পুকুরটিই ছিল নাজমুলের পরিবারের একমাত্র জীবিকার উৎস। দিন-রাতের শ্রম, আশা ও বিনিয়োগ ছিল এই মাছগুলোকে ঘিরে। তার চাচাতো ভাই একে এম জহিরুল ইসলাম আজাদি বলেন, “এই পুকুরে আমার ছোট ভাই নাজমুল কতটা পরিশ্রম করেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। যেন মাছ নয়, নিজের সন্তানকে লালন করেছে। আজ শুধু মাছই মারা যায়নি, মারা গেছে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ।”

বর্তমানে পুকুরের পানিতে কেবল মৃত মাছের ভেসে থাকা দেহ, নিস্তব্ধতা আর এক অসহায় মানুষের দুঃস্বপ্নই সাক্ষী হয়ে আছে। স্থানীয়দের ধারণা, অন্তত ১৫ লক্ষাধিক টাকার শিং মাছ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ করে নাজমুলের লাখো টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এতে এলাকার অন্যান্য মৎস্যচাষীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের ভাষ্য, “একটির পর একটি ফিশারিতে যদি বিষ প্রয়োগ করা হয়, তবে বছরের পর বছর শ্রম ও বিনিয়োগ এক রাতে ধ্বংস হয়ে যাবে।” অপর এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “এটি প্রতিহিংসামূলক ঘটনা। পূর্ব শত্রুতার জেরেই ফিশারিতে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে।” স্থানীয় বিএনপি নেতা হাদিস মিয়া বলেন, “শিং মাছের ফিশারিতে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ও এলাকাবাসী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আশা করছি, দ্রুত অপরাধীরা গ্রেপ্তার হবে।” ভুক্তভোগী নাজমুল মৌখিকভাবে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।

আঠারবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মহিউদ্দিন জানান, “এখনো পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এ ঘটনার পর স্থানীয় মৎস্যচাষী ও কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।