DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাসোমবার ২৫শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার বেড়েছে,সাড়ে চারশ’ কোটি জলে

News Editor
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০ ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ও মৃত্যুহার বেড়েছে। অথচ এ ধরনের রোগে আক্রান্তের হার ও অকালমৃত্যুর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের।এজন্য গত তিন বছরে ব্যয়ও হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা (৪৪৪ কোটি ২৮ লাখ)। কিন্তু যথাযথ খাতে ব্যয়ের পরিবর্তে এ টাকার বড় অংশ শুধু তথাকথিত প্রশিক্ষণ সেমিনার ও মুদ্রণ কার্যক্রমেই চলে গেছে।

বাকি টাকা ব্যয় হচ্ছে হাতেগোনা স্থানে। যার প্রভাব পড়ছে না। বাস্তবে না হলেও ব্যয় দেখানো হয়েছে শুধু কাগজেকলমে- এমন মন্তব্য অসংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের।

বিশেষজ্ঞরা জানান, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতি অর্থবছরে সরকারের বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও কার্যত তা দেশের জনগণের কোনো উপকারে আসছে না। ফলে এ যাবত ব্যয়ের প্রায় পুরো টাকাই জলে গেছে বলে তারা মনে করেন।

প্রমাণ হিসেবে বলেন, যেখানে মৃত্যুর হার কমার কথা সেখানে উল্টো অসংক্রামক রোগে অকাল মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ বেড়েছে। আগে যা ছিল ৫৭ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশে।

উচ্চ রক্তচাপের হার ১৮ ঊর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে আগে ছিল ১৭ শতাংশ, বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে। এমনকি দেশে করোনায় মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত অসংক্রামক রোগ।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই কো-মর্বিডিটি (হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার) বা মৃত্যুঝুঁকি ছিল।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে চলমান অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ১১১৮ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) কর্মসূচির আওতায় এ সংক্রান্ত কাজ চলছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৪৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এনসিডি কর্মসূচির ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ১৬৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে ব্যয় হয় ১৪০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

ধর্ষক ভিপি নুর নয়, ধর্ষণ করেন মামুন: ঢাবি ছাত্রী

ব্যয়ের হার ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ ছিল ১৭১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

ব্যয় হয় ১৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ব্যয়ের হার ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বরাদ্দ ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

ব্যয় হয় ১৪৮ কোটি দুই লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ব্যয়ের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অথচ অপারেশনাল প্ল্যানের ইন্ডিকেটর অনুসারে কোনো অর্জন হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে।

এর মধ্যে হৃদরোগজনিত কারণে ৩০ শতাংশ, ক্যান্সারে ১২ শতাংশ, জটিল শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগে মৃত্যু ঘটে আরও ১২ শতাংশ মানুষের।

ওপির কার্যক্রম শুরুর আগে এনসিডি অন্যতম রোগ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের হার ছিল ১৭ শতাংশ, যা বর্তমানে বেড়ে ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপের হার (অপারেশনাল প্ল্যানের ১নং সূচক) কমানো বা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু কিছু পোস্টার, গাইডলাইন এবং ঢাকা শহরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় অসংক্রামক রোগের বার্তা প্রচার করে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।

অন্য দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় এনসিডি ম্যানেজমেন্ট মডেল হাসপাতাল স্থাপন করার কথা। কাগজেকলমে সেটা দেখানো হলেও বাস্তবে এনসিডি ম্যানেজমেন্ট মডেলের কার্যক্রম ৪-৫টি উপজেলা ছাড়া কোথাও দৃশ্যমান নয়।

২০২০ সালের জুনের মধ্যে ২০টি উপজেলা এবং ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিকে এটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও মাত্র দুটি উপজেলায় হয়েছে। কিন্তু কাগজেকলমে দেখানো হয়েছে ৬৬টি উপজেলা এবং ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক।

১০টি মেডিকেল কলেজে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।

ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা, ফলো-আপ, ক্যান্সার রোগের হার এবং ঝুঁকির কারণসমূহ, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ক্যান্সার রোগী শনাক্তকরণ এবং তাদের ফলো-আপ ইত্যাদি বিষয়ের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্দিষ্ট ছকে ক্যান্সার রোগীদের নির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংবলিত একটি ডাটাবেজ করার কথা।

এই কাজেও তেমন অগ্রগতি নেই। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি বিভাগে নতুন ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন করেছেন, সেখানে গত তিন বছরে হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্র্রি বাস্তবায়নে তেমন কিছুই হয়নি।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

এছাড়া স্বাস্থ্য প্রবর্ধক বিদ্যালয় (হেলথ প্রোমোটিং স্কুল, হেলদি সিটি) স্বাস্থ্যকর শহর জাতীয় বহুখাতভিত্তিক অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এনসিডি ম্যানেজমেন্ট মডেল অনুসারে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কর্নার থাকার কথা। যেখানে সার্বক্ষণিক একজন প্রশিক্ষিত নার্স/স্যাকমো অসংক্রামক রোগ সংক্রান্ত সেবা প্রদান করবেন।

এই এনসিডি কর্নারগুলোয় কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের পর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিবন্ধিত হবে।

সেখানে তাদের রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পরামর্শ, সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান, ফলো-আপ, ওষুধ সরবরাহ, তথ্য সংগ্রহ এবং নিয়মিত রিপোর্টিং করা হবে।

যাতে ওই মডেল উপজেলার ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের অসংক্রামক রোগের অবস্থা, চিকিৎসা এবং সচেতনতা প্রতিটি ক্ষেত্রে সেবা সুনিশ্চিত হয়।

এই এনসিডি কর্নার থেকে জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগী জেলা সদর হাসপাতাল/মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করাও এই মডেলের (এনসিডি কর্নার) আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

অথচ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পে ৪৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে । অপারেশনাল প্ল্যানের একটি ইন্ডিকেটর অনুসারে কোনো অর্জন হয়নি।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক অসংক্রামক রোগ কাদের ক্ষেত্রে বেশি, সেটি আগে নির্ণয় করা দরকার ছিল।

এর জন্য দেশব্যাপী একটি সার্ভিলেন্স করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি করা হয়নি। এটি হলে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশ একটি সুস্পষ্ট তথ্য পেত- কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে।

এমনকি কোন শিশু কোন জেনেটিক রোগ নিয়ে জন্ম নিয়েছে, সেটিও নির্ণয় করা দরকার ছিল। তাহলে বোঝা যেত ভবিষ্যতে কোন শিশু কোন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কিন্তু এনসিডি নিয়ন্ত্রণে এই মূল কাজগুলোর কিছুই করা হয়নি। উন্নত দেশগুলোয় এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই এনসিডি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

অধিদফতরের এনসিডিসি শাখা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০২২ এর জুন পর্যন্ত মেয়াদে চলমান অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার (পিএম-১) হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন ডা. আবদুল আলীম।

তিনি ইতঃপূর্বে ডিপিএম হিসেবে পাঁচ বছর ধরে মেজর এনসিডি কম্পোনেন্ট নিজ দখলে রেখেছেন। এনসিডিসি অপারেশনাল প্ল্যানের মোট বরাদ্দের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ তিনিই ব্যয় করেন।

প্রতি বছর আনুপাতিক হারে এই বিশাল বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অনুপাত বিশেষ করে প্রিন্টিং, পাবলিসিটি, প্রশিক্ষণ ও সেমিনার, ওষুধ, এমএসআর, ফার্নিচার ক্রয়ে ব্যয় করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবদুল আলীমকে পাওয়া যায়নি। দুপুরে ফোন করলে প্রথমে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোন বন্ধ করে দেন।

জানতে চাইলে এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর ডা. হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, তিনি এই দায়িত্বে এসেছেন অল্প দিন। তবে বিষয়গুলো তিনি জানেন। বর্তমানে ওপি রিভিশন ও সংশোধন চলছে।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ওপির মেয়াদ আরও এক বছর বেড়ে ২৩ সাল পর্যন্ত যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, মেজর এনসিডি কার্যক্রম নিয়ে আমি বিস্তারিত জানি না।

ডিজি হিসেবে যোগদানের পর থেকে কোভিড নিয়ন্ত্রণে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। তবে আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নেব। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। -যুগান্তর

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০