দুই ভাইয়ের আধিপত্যের লড়াইয়ে রাজবাড়ীতে আ‘লীগের কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দল
রাজবাড়ী প্রতিনিধি ॥ রাজবাড়ী জেলা পর্যায়ের দুই নেতা আপন দুই ভাই কাজী কেরামত আলী এমপি ও কাজী এরাদত আলী ওরফে মেঝো ভাইয়ের আধিপত্যের লড়াই চরমে পৌঁছেছে।
একজন আরেকজনকে আ‘লীগের জেলা কমিটি থেকে বিতাড়িত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
এর জের ধরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাজী কেরামত আলী এমপি‘র ছবি সম্বলিত প্রায় তিনশত ফেস্টুন ও ব্যানার ভাংচুর করা হয়েছে।
দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই মতবিরোধ দেখা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
সরকারী দলের চিহ্নিত ক্যাডাররা নিজেদের বাঁচাতে নেতা বদল করছেন।
উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক বিপ্লব কুমার ঘোষ আগে এমপি কাজী কেরামত আলী অর্থাৎ আ‘লীগের সাথে থাকলেও এবার মেঝো ভাইয়ের পকেট কমিটিতে যোগ দিয়েছেন।
অনেক মামলার আসামী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মেঝো ভাইয়ের পকেট কমিটিতে যোগ দিয়ে দলীয় নিয়ম-নীতি নষ্ট ভংগ করেছেন।
এই মেঝো ভাইয়ের হাইব্রিড নেতাকর্মী দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী আ‘লীগের পক্ষ থেকে কাজী কেরামত আলী এমপি পালকী হোটেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়েজন করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে, দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টিকারী হিসেবে মেঝো ভাইকেই দায়ী করা হয়।
অপদিকে,জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব আবারো প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে।
দুই নেতার বিপরীতমূখী আচরনের প্রভাব তৃণমূলেও পড়তে শুরু করেছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাত্রে বঙ্গবন্ধু ও প্রধান মন্ত্রীর এবং সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী এমপি‘র ছবি সম্বলিত ব্যানার ভাংচুরেও অংশ নিয়েছে দলে অনুপ্রবেশকারীরা বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গোয়ালন্দে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন ছেঁড়া ও ভাংচুরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে পৃথক পৃথকভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে উপজেলা আ‘লীগ ও যুবলীগ।
গত ১৭/০৯/২০ইং তারিখ রোজ বৃহষ্পতিবার সকাল ১১ টার সময় বাজারের শহীদ মিনার চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগ। সম্মেলনের আগে তারা বাজারের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। যুবলীগের সভাপতি মোঃ ইউনুস মোল্যার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী কেরামত আলী এমপিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই দাবীতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সংগঠনের নেতাকর্মীও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ এলাকায় তিন শতাধিক ব্যানার ও ফেস্টুন টানায়। এতে কাজী কেরামত আলীর ছবি ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংযুক্ত ছিল। ওই ব্যানারগুলো রাত্রের আধারের ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ইমরানুর রহমান সজল বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামী করা হয়। অপরদিকে, একই দিনে দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তারা একই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারন সম্পাদক বিপ্লব কুমার ঘোষ।সম্মেলনে ফেস্টুন ছেঁড়ার ঘটনায় তারা নিন্দা ও দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানান। তবে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তেমন দেখা যায়নী বলে সূত্রটি জানায়।
আরও পড়ুন ঃরাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের ১৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
গত ১৭/০৯/২০ইং তারিখে উপজেলা আ‘লীগ কার্যালয়ে উপস্থিতিরা সবাই (এরাদত কাজী) মেঝো ভাইয়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এরাদত কাজীর পরিচিত থাকলেও সম্প্রতি ইউনিয়ন এবং থানা পর্যায়ে হাইব্রিড নেতাকর্মীদের নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করায় সেটা নষ্ট হচ্ছে। দলে অনুপ্রবেশকারীদেরকে নিজের গ্রুপে টেনে নেয়া এবং তাদের সঙ্গে মিছিল-সমাবেশ করায় দলের সাধারন নেতাকর্মী ও এলাকার সাধারন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগ দলে দুই ভাইয়ের কোন্দল এখন আর গোপন নেই।
ক্ষমতাসীন এই দলটির স্থানীয় কোন্দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ প্রচারণায় রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আক্রমণ প্রাধান্য পাচ্ছে বেশী। এতে চরম বিব্রতবোধ করছেন ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীরা।
তারা পড়েছেন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থায়। দলের সিনিয়র নেতাদের এরকম কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনায় দলীয় রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক দলের এক প্রবীন নেতা এই অভিযোগগুলি করেন।