আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ প্রতিনিধি
দুরুন্তপনা, ছুটো-ছুটি আর হই-হুল্লোরে কেটেছে তাঁর শৈশব। আর দুই চারজন শিশুর মতই মা-বাবার সাথে সুখে দিন কাটছিল তাঁর। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল মেধাবী। বড় হয়ে চাকুরি নিয়ে মা-বাবার দুঃখ ঘোচাবেন। জীবনের লক্ষ্য পূরণে তাঁর ছিল অদম্য ইচ্ছা। কিন্তু বয়স বারোর ঘড় না পেরুতেই তাঁকে আজীবনের জন্য ঘড়বন্দী হতে হল। ঘটনাটি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা নিপেনের।
সে ওই গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের দ্বিতীয় সন্তান। এখন তাঁর বয়স ৪২ বছর। ১২ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ করেই নিপেনের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে তাঁর বাবা-মা। পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নিপেন। গরীব পরিবার হওয়ার পরও অনেকবার নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে পরিবারটি। বর্তমানে অর্থাভাবে নিপেনকে ঘড়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর্থিক সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন : আগামী সপ্তাহেই বশেমুরবিপ্রবিতে শুরু হতে পারে অনলাইন ক্লাস
আর্থিক সামর্থ না থাকায় ভাগ্যে জুটছে না চিকিৎসা সেবা। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে তাঁর পরিবার। নিপেনের মা ও প্রতিবেশীরা জানান, আগে নিপেন কিছুটা শান্ত ছিল। কিন্তু এখন তাঁকে ছেঁড়ে দিলেই মানুষকে মারপিট, গালি-গালাজ, ঘড়-বাড়িতে ঢিল ছোঁড়ে। অত্যাচার বেড়েই যায়। অনেকেই তাঁর আঘাতে আহত হয়েছেন। এজন্য, গত পাঁচ বছর ধরে পাঁয়ে লোহার শিকল দিয়ে একটি মাটির ঘড়ে আটকে রাখা হয়েছে। বিয়ে দিলে হয়তো নিপেন ভালো হতে পারে- এমন চিন্তা থেকে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। সাত বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে তাঁর।
বয়স্ক মা সম্প্রতি বয়স্ক ভাতা পাওয়া শুরু করলেও নিপেনের পরিবার সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের। তাই নিপেনের পরিবার সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার দাবি করেছেন।নিপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, মানসিক ভারসম্যহীন হওয়ায় আমার ভাইকে ১২ বছর বয়স থেকে ঘরে বন্দী করে রেখেছি। একসময় চিকিৎসা করতে পারলেও এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নিপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অত্যাচার করে বলে বাধ্য হয়ে শিকল দিয়ে ঘড়ে আটকে রেখেছি।
নিপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল জানান, আগে তাঁর পাগলামি এত ছিলনা। কিন্তু দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। অভাবের সংসার। টাকার অভাবে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারি সহায়তা পেলে হয়তো উন্নত চিকিৎসা করাতে পারবো। তিনি আরও জানান, স্বামী ও এক মেয়েকে নিয়ে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হয়। তাই আমরা সরকারের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চাই।
আমার বিশ্বাস, উন্নত চিকিৎসা পেলে আমার স্বামী স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমি নিপেনের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু কেউ তাঁর সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায় নি। তবুও আমি তাঁদের জন্য কিছু করার ব্যবস্থা করব।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, ‘দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তাঁর পরিবারকে সহায়তা করার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।