দেশে একের পর এক নারী ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কারও বাড়িতে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ইচ্ছে হলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্বাচনী মনোভাব’ এসব অপকর্ম ও নৈরাজ্যকে উৎসাহিত করছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মনোভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে’ ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা অপকর্মে লিপ্ত ও উৎসাহিত হচ্ছেন।সামগ্রিক ঘটনাগুলো, সামগ্রিক পরিবেশগুলো বলে দিচ্ছে, আর বেশিদিন নয় অনেক হয়েছে। এই জালিম সরকার এত অত্যাচার এত নির্যাতন করেছে, তাদের সময় ফুরিয়ে আসছে।’
রিজভী বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের কারণে অনুপ্রাণিত হয়ে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এদের হাতে ধারালো অস্ত্র-পিস্তল। ভোটের দিন এরা জনগণকে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেবে না, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করবে, তবুও তাদের বিচার হবে না। আর এগুলোতেই অনুপ্রাণিত হয়ে এরা এমসি কলেজের ঘটনার মতো বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এই যে এমসি কলেজের ঘটনা এ সমস্ত ঘটনা কিন্তু বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র, যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা করে যাচ্ছে। এদেরকে দিয়েই তো ভোট কেন্দ্রে ভোট চুরি করা হয়েছে, ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য বলে- ‘আমরা যা করছি সরকারের জন্য করছি। মেজর সিনহার মতো ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিসের মেজর সিনহা, এগুলো করলে আমাদের কিছুই হবে না।’
রাজনীতির হাওয়া যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে: রিজভী
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এটি একটি অলীক কল্পনা। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এখন থেকে আর রাতে নির্বাচন হবে না। যার দায়িত্ব নির্বাচন সুষ্ঠু করা তিনি যখন এ কথা বলেন, তখন কথার মধ্য দিয়েই তিনি প্রমাণ করেন- আগের সমস্ত রাতের ভোটের নির্বাচনের জন্য তিনি দায়ী।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার একনায়কতান্ত্রিক, জুলুমবাজ ও নাৎসিবাদী। এরা তো নির্বাচন মানে না, মনে করে কীসের নির্বাচন? নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী থাকবে, তারা যা করবে তাই হবে, কীসের বিএনপি? কীসের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা? তারা মনে করে, ‘আমরা যেভাবে নির্বাচন করবো সেভাবেই নির্বাচন হবে। আমরা যা করবো তাই হবে’।’
রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের হাত রক্তে রঞ্জিত। দেশের মাটি কোনদিনও এসব অপকর্ম গ্রহণ করবে না। এবার তাদের অত্যাচার নির্যাতন চারিদিক থেকে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। সরকারও কিন্তু এটি বুঝতে পারছে না, সরকার মনে করছে ‘আমাদের তো পুলিশ আছে, র্যাব আছে’। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে জনগণের শক্তি গজিয়ে উঠছে এটা সরকার টের পাচ্ছেন না। যখন তাদের সিংহাসন হুড়মুড় করে উল্টে পড়ে যাবে সেদিন বুঝবে- ‘হায় একি করেছি আমরা’।’
ভোটারদের ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিদিন হামলা করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারপরেও আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আগামী ১৭ তারিখ আলহাজ্ব সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সেখানে বিপুল জনস্রোতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভেসে যাবে। জনগণের শক্তি যখন রাস্তায় নামবে এই কাপুরুষরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে।’
নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী সাবেক এমপি আলহাজ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো। আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সরকারের সন্ত্রাসী হামলার মোকাবিলা করবো। বিজয় আমাদেরই হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।