ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সক্রিয় গোল্ড কয়েন চক্ররের প্রতারনার শিকার হচ্ছে দরিদ্র মানুষ

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৬:১৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৬৪ বার পড়া হয়েছে

শেখ সাগর আহমেদ,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি: বাগেরহাটের চিতলমারীতে সক্রিয় ‘গোল্ড কয়েন’ চক্র। এই চক্রের অভিনব প্রতারণার স্বীকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। সর্বশেষ, তাদের কাছে প্রায় দেড় লাখ টাকা হারিয়েছেন সাতক্ষীরার দরিদ্র বাসচালক আইউব আলী।

চার দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি। এ বিষয়ে চিতলমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে, কাউকে আটক করতে পারেনি। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে দাবি পুলিশের।

স্থানীয়রা জানান, কখনও মিসকল দিয়ে, কখনও সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সখ্য গড়ে তোলে এই চক্রটি।

এরপর সুযোগ মতো ওইসব ব্যক্তিকে মূল্যবান গোল্ড কয়েন দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। অল্প টাকায় গোল্ড কয়েন কিনে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে বলে প্রলোভন দেখায়।

কখনও বিশ্বাস বাড়াতে তাদের এলাকায় এনে স্থানীয় স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে গোল্ড কয়েন পরীক্ষা করেও দেখানো হয়।

এরপর দর কষাকষি চলতে থাকে। নির্ধারিত দিনে ক্রেতাকে টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার পর কখনও ওই চক্রের অন্য সদস্যরা ভুয়া পুলিশ সেজে গোল্ড কয়েন ক্রেতাকে নানাভাবে হয়রানি করার কথা বলে আরও অর্থ হাতিয়ে নেয়।

কখনও বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের পালাতে বাধ্য করা হয়। এভাবে গত এক যুগ ধরে প্রতারণা করে আসছে চিতলমারীর একটি ‘গোল্ড কয়েন চক্র’।

দেশের প্রথম সহিংসতার রাজনীতি চালু করে বিএনপি-জামায়াত

চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে কিছু দুর্বৃত্ত মিলে এই চক্র গড়ে তুলেছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।

‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের সর্বশেষ প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুরলী গ্রামের বাসচালক আইউব আলী।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় প্রায় ১৫ দিন আগে পরিচয় হয় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রদীপ বিশ্বাসের সঙ্গে। ওই এলাকা দিয়ে তারা বাড়ি ফিরছিল।

তাদের কাছে কোনও টাকা ছিল না জানালে মানবিক কারণে ভাড়া নেওয়া ছাড়াই তাদের পৌঁছে দেন তিনি। বাস থেকে নামার সময় উপকার করায় প্রদীপ বিশ্বাস তার কাছে মোবাইল নম্বর চেয়ে নেন।

পরে বাড়ি ফিরে প্রদীপ তার মোবাইলে কল দেয়। অল্প সময়ে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় তার সঙ্গে। একপর্যায়ে তাকে গোল্ড কয়েনের কথা বলে।

প্রথমেই তিনি এটা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হয়ে তার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও সুদে ঋণ করে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে গত রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) চিতলমারী আসেন।

এদিন দুপুরে তাকে স্থানীয় ডাকাতির মোড় এলাকার নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর তার কাছ থেকে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি চিতলমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে।

তিনি গত চার দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে চিতলমারির রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বলেও জানান।

এবিষয়ে পার্শ্ববর্তী কলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিকদার মতিয়ার রহমান বলেন, ‘হিজলা ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ বাজার এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে এই গোল্ড কয়েন চক্র সক্রিয়।

আর এর সঙ্গে জড়িত স্থানীয় একটি মহল। আমি নিজে প্রশাসন ও পুলিশ দিয়ে অনেক চেষ্টা করেও তাদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছি। থানা পুলিশও বিভিন্ন সময় এই চক্রটিকে সহায়তা করেছে।’হিজলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আজমীর আলী বলেন, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চক্রটি সোনা বিক্রির নামে মানুষের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা করেই চলেছে।

বিভিন্ন সময় এদের ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ ধরেছে। কখনও তাদের ছেড়ে দিয়েছে। আবার কখনও উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে তারা আবার অপকর্ম শুরু করেছে।অন্য জেলার মানুষ লাভের আশায় ও লোভে পড়ে তাদের কাছে গোল্ড কয়েন কিনতে আসে। তাদের কাছ থেকে টাকা লুটে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুলিশের ভয় দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সবাই এই চক্রের কাছে অসহায় হয়ে যায়।

এ বিষয়ে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, চিতলমারী-নাজিরপুর সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন অফরাধী চক্র সক্রিয়।
তিনি এই থানায় যোগদানের পর চক্রগুলো দমনে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযোগের পর অভিযুক্তদের আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

সক্রিয় গোল্ড কয়েন চক্ররের প্রতারনার শিকার হচ্ছে দরিদ্র মানুষ

আপডেট সময় : ০৬:১৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

শেখ সাগর আহমেদ,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি: বাগেরহাটের চিতলমারীতে সক্রিয় ‘গোল্ড কয়েন’ চক্র। এই চক্রের অভিনব প্রতারণার স্বীকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। সর্বশেষ, তাদের কাছে প্রায় দেড় লাখ টাকা হারিয়েছেন সাতক্ষীরার দরিদ্র বাসচালক আইউব আলী।

চার দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি। এ বিষয়ে চিতলমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে, কাউকে আটক করতে পারেনি। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে দাবি পুলিশের।

স্থানীয়রা জানান, কখনও মিসকল দিয়ে, কখনও সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সখ্য গড়ে তোলে এই চক্রটি।

এরপর সুযোগ মতো ওইসব ব্যক্তিকে মূল্যবান গোল্ড কয়েন দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। অল্প টাকায় গোল্ড কয়েন কিনে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে বলে প্রলোভন দেখায়।

কখনও বিশ্বাস বাড়াতে তাদের এলাকায় এনে স্থানীয় স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে গোল্ড কয়েন পরীক্ষা করেও দেখানো হয়।

এরপর দর কষাকষি চলতে থাকে। নির্ধারিত দিনে ক্রেতাকে টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার পর কখনও ওই চক্রের অন্য সদস্যরা ভুয়া পুলিশ সেজে গোল্ড কয়েন ক্রেতাকে নানাভাবে হয়রানি করার কথা বলে আরও অর্থ হাতিয়ে নেয়।

কখনও বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের পালাতে বাধ্য করা হয়। এভাবে গত এক যুগ ধরে প্রতারণা করে আসছে চিতলমারীর একটি ‘গোল্ড কয়েন চক্র’।

দেশের প্রথম সহিংসতার রাজনীতি চালু করে বিএনপি-জামায়াত

চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে কিছু দুর্বৃত্ত মিলে এই চক্র গড়ে তুলেছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।

‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের সর্বশেষ প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুরলী গ্রামের বাসচালক আইউব আলী।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় প্রায় ১৫ দিন আগে পরিচয় হয় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রদীপ বিশ্বাসের সঙ্গে। ওই এলাকা দিয়ে তারা বাড়ি ফিরছিল।

তাদের কাছে কোনও টাকা ছিল না জানালে মানবিক কারণে ভাড়া নেওয়া ছাড়াই তাদের পৌঁছে দেন তিনি। বাস থেকে নামার সময় উপকার করায় প্রদীপ বিশ্বাস তার কাছে মোবাইল নম্বর চেয়ে নেন।

পরে বাড়ি ফিরে প্রদীপ তার মোবাইলে কল দেয়। অল্প সময়ে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় তার সঙ্গে। একপর্যায়ে তাকে গোল্ড কয়েনের কথা বলে।

প্রথমেই তিনি এটা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হয়ে তার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও সুদে ঋণ করে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে গত রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) চিতলমারী আসেন।

এদিন দুপুরে তাকে স্থানীয় ডাকাতির মোড় এলাকার নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর তার কাছ থেকে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি চিতলমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে।

তিনি গত চার দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে চিতলমারির রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বলেও জানান।

এবিষয়ে পার্শ্ববর্তী কলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিকদার মতিয়ার রহমান বলেন, ‘হিজলা ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ বাজার এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে এই গোল্ড কয়েন চক্র সক্রিয়।

আর এর সঙ্গে জড়িত স্থানীয় একটি মহল। আমি নিজে প্রশাসন ও পুলিশ দিয়ে অনেক চেষ্টা করেও তাদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছি। থানা পুলিশও বিভিন্ন সময় এই চক্রটিকে সহায়তা করেছে।’হিজলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আজমীর আলী বলেন, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চক্রটি সোনা বিক্রির নামে মানুষের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা করেই চলেছে।

বিভিন্ন সময় এদের ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ ধরেছে। কখনও তাদের ছেড়ে দিয়েছে। আবার কখনও উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে তারা আবার অপকর্ম শুরু করেছে।অন্য জেলার মানুষ লাভের আশায় ও লোভে পড়ে তাদের কাছে গোল্ড কয়েন কিনতে আসে। তাদের কাছ থেকে টাকা লুটে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুলিশের ভয় দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সবাই এই চক্রের কাছে অসহায় হয়ে যায়।

এ বিষয়ে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, চিতলমারী-নাজিরপুর সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন অফরাধী চক্র সক্রিয়।
তিনি এই থানায় যোগদানের পর চক্রগুলো দমনে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযোগের পর অভিযুক্তদের আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।