দীর্ঘ ছয় মাস পর শুরু হয়েছে ওমরা। মক্কা ও মদিনার পবিত্রতম দুই মসজিদ হাজিদের জন্য তাদের দ্বার বন্ধ রাখবে, অকল্পনীয় এ ঘটনাই জন্ম দেয় কোভিড-১৯।
মক্কার হারাম শরীফ আর মসজিদুল নববী’তে প্রার্থনা করার সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে গত ৩১মে ইসলামের শেষ নবীর মসজিদে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে অচিরেই মক্কার মসজিদ খুলে দেওয়া হবে এমন আশায় বুক বাঁধেন ওমরা যাত্রীরা।
সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে। রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ওমরা আয়োজন শুরু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। গত রোববার অতিমারির পর প্রথমবারের মতো টেলিভিশনের পর্দায় ওমরা পালনকারীদের কাবা ঘরের চারপাশে তাওয়াফ করার দৃশ্য অবলোকন করেন বিশ্ববাসী। আবেগ আপ্লুত হন অনেকে। খবর আরব নিউজের।
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ইউপি সদস্য গ্রেফতার
৩০ বছরের তরুণী দানিয়া আহমেদ জেদ্দায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ”কাবার চারপাশে মাতাফের জায়গা হাজিদের দিয়ে কিছুটা হলেও ভরে যাওয়ার দৃশ্য, অনেকদিন পর দেখা গেল। এ দৃশ্য চিরকালে স্মরণে থাকবে।”
”টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার সময় শেষ পর্যন্ত ওমরা করা যাবে কিনা- তা নিয়েই আশঙ্কা বিরাজ করছিল। সে শঙ্কা কেটেছে বটে। কিন্তু, অপেক্ষার পর আমরা যারা ওমরা করার জন্য নিবন্ধিত হয়েছি, তাদের আবেগ অনেকগুণ বেড়েছে। পবিত্র স্থানগুলোতে এভাবে পূণ্যার্থীদের সমাগম দেখে খুব স্বস্তি পাচ্ছি।”
ওমরা পালনে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর রোববার প্রথম ধাপে ছোট হজটি পালনের উদ্দেশ্যে প্রায় এক হাজার পূণ্যার্থী আসেন মসজিদুল হারামে। তাদের সঙ্গে ছিলেন সৌদি সরকার নিয়োজিত পরিদর্শক এবং পরামর্শকেরা। সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য বিধির শর্তাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করে যা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হারাম শরীফে প্রবেশের আগে প্রত্যেকের গায়ের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। চলে শরীর জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া। তারপর স্মার্ট ব্যান্ড, মাস্ক পড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ওমরার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন হাজিরা।
প্রভাবিত হয়েছিলেন মক্কা নগরীর বাসিন্দারাও। শত শত বছর ধরে তারা মসজিদুল হারামে নিয়মিত গিয়ে প্রার্থনা করেছেন। সেই চর্চায় ব্যাঘাত ঘটায় কোভিড-১৯। এখনও অনেকেই কাবা থেকে দূরে থাকার মনঃকষ্ট অনুভব করছে।
এমনই একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মক্কাবাসী নারী থুরায়া আব্দুলগাফফার আব্দুলশাকুর। এতদিন পর কাবায় প্রার্থনা হতে দেখে তিনি যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
”এ মসজিদে ফিরে আসার জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি। আশঙ্কা করেছিলাম, আমার জীবদ্দশায় আর সেই সৌভাগ্য হবে না। তাই টিভিতে ওমরার দৃশ্য দেখার সময় আমার চোখের কোণ বার বার ভিজে উঠেছে,” তিনি বলছিলেন।
”মহামারি আমাদের অনেক কিছু করা থেকেই বিরত রেখেছে। একারণে আমাদের মসজিদগুলো বন্ধ হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের থেকেও দূরে থাকতে হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। কর্তৃপক্ষের এমন সতর্ক পদক্ষেপের জন্য আমি তাদের সাধুবাদ জানাই,” তিনি যোগ করেন।