এবার সব ধরনের লাশ দাফনের ওপর ফি নির্ধারণের আদেশ জারি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। একটি লাশ দাফনের জন্য এখন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার এবং সর্বনিম্ন দেড় হাজার টাকা গুনতে হবে পরিবারকে। তাছাড়া কেনা কবর সংরক্ষণের জন্য সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ফি পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন কবরস্থান পরিচালনা নীতিমালা-২০২০-এর আলোকে গত ৫ অক্টোবর ডিএসসিসির সচিব আকরামুজ্জামানের স্বাক্ষরে ওই আদেশ জারি হয়। আদেশটি জারির পর গত বুধবার (৭ অক্টোবর) থেকে লাশ দাফনে টাকা আদায় শুরু হয়েছে।
বর্তমান সরকারের অধীনে মানুষের কোনো কিছুই নিরাপদ নয় : মান্না
একটা সময় নামমাত্র খরচ নেয়ার পর গত দুই বছরেরও বেশি সময় পুরোপুরি বিনামূল্যে ২০ হাজারেরও বেশি লাশ দাফন করে হঠাৎ ফি আদায়ের এ নির্দেশনায় মৃতের স্বজন বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দরিদ্রদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও কবরস্থান কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, ডিএসসিসির নির্ধারিত ফি পরিশোধ ছাড়া লাশ দাফন করা সম্ভব নয়।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) আজিমপুর কবরস্থান পরিদর্শন করে লাশ দাফনের ফি আদায়ের সত্যতা মিলেছে।
আজিমপুর পুরনো কবরস্থানের সহকারী মোহরার নুরুল হুদা ও ঠিকাদার কল্লোল জানান, সিটি করপোরেশনের নির্দেশের পর গতকাল থেকে ফি আদায় শুরু হয়েছে। এর বেশি তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
জারিকৃত নীতিমালা অনুসারে, আগে ফ্রি থাকলেও এখন প্রতিটি সাধারণ লাশ দাফন বাবদ নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া বড়, মাঝারি ও ছোট কবরের ক্ষেত্রে বাঁশ, চাটাই ও কবর খনন বাবদ যথাক্রমে এক হাজার ৯২ টাকা, ৭৭৭ টাকা ও ৪৬০ টাকা ৯৫ পয়সা পরিশোধ করতে হবে। এ হিসাবে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ বড়, মাঝারি ও ছোট কবরে লাশ দাফনে যথাক্রমে দুই হাজার ১৯২ টাকা, এক হাজার ৭৭৭ টাকা এবং এক হাজার ৪৬০ টাকা ৯৫ পয়সা পরিশোধ করতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, কবরস্থানে অগ্রিম কবর কিংবা অগ্রিম কবর সংরক্ষণের জন্য জায়গা সংরক্ষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। পূর্বে সংরক্ষিত কবরে কোনো লাশ দাফন করতে চাইলে (পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই ও বোন ছাড়া অন্য কেউ নয়) ৫০ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। ২০১৪ সালের আগে সংরক্ষিত কবরে লাশ দাফনের ফি ছিল তিন হাজার টাকা। ২০১৪ সালে এ ফি ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতদিন পর্যন্ত পুনঃকবরে এ ফি বহাল ছিল।
কেনা কবর সংরক্ষণের জন্য এখন থেকে ১০ বছরে মেয়াদে পাঁচ লাখ, ১৫ বছর মেয়াদে ১০ লাখ, ২০ বছর মেয়াদে ১৫ লাখ ও ২৫ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা ডিএসসিসিকে পরিশোধ করতে হবে। ৫ অক্টোবরের আগে এ হার ছিল যথাক্রমে তিন লাখ, ছয় লাখ, নয় লাখ ও ১২ লাখ টাকা।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, আজিমপুর নতুন পল্টন লাইনের বাসিন্দা এক ব্যক্তি তার বড় ভাইয়ের লাশ দাফনের জন্য কবর দেখতে এসেছেন। আলাপকালে তিনি দুই হাজার ১০০ টাকা পরিশোধের কথায় হতবিহ্বল হয়ে সহকারী মোহরারের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন, আমি তো জানি এখানে ফ্রি লাশ দাফন হয়। তাছাড়া আমরা মহল্লার বাসিন্দা। লাশ দাফনের জন্য কবে আবার টাকা আদায় শুরু হলো?
ধানমন্ডির বাসিন্দা খান মোমিনুল ইসলামকে তার সংরক্ষিত কবরে দাফনের জন্য দুপুরের আগে ফি পরিশোধ করে গেছেন স্বজনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজিমপুর কবরস্থানের নিয়মিত লাশ দাফন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত এক ব্যক্তি জানান, এ কবরস্থানে প্রতিদিন ২৫-৩০টি লাশ দাফন হয়। গত দুই বছর যাবত লাশ বিনামূল্যে দাফনের বিষয়টি প্রশংসিত হয়ে আসছিল। হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত হলো বুঝলাম না।
এ নির্দেশনায় দরিদ্র পরিবারের লোকজনের অসুবিধা হবে বলে মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।