আমিনুল জুয়েল, নওগাঁ প্রতিনিধি:
কোন নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা নেই নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। ঢিমে তালে কাজ চলে এখানে। মনে হবে, আঠারো মাসে বছর। তবে বাড়তি টাকা গুনলে দ্রুতই হাসিল হয় কাজ। জরুরি পাসপোর্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহের কথা থাকলেও দুই মাসেও সেই কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, দালালের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছেন সেবা প্রত্যাশীরা। আবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুলের খেসারতও গুনতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে বিড়ম্বনা আর হয়রানির যেন সীমা থাকে না।
জানা গেছে, নওগাঁ পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দালালরা সেখানে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। দালাল ছাড়া কেউ অফিসে সেবা নিতে গেলে শুরু হয় বিড়ম্বনা। আর দালালের মাধ্যমে অফিসে গেলে কর্মচারীরা সেই আবেদন ফরমে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে। আর সেই মোতাবেক কমিশন বাণিজ্য শুরু হয়।
ভুক্তভোগী শহরের খাস-নওগাঁ মৃধাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আবদুল হান্নান জানায়, তাঁর ১২ বছরের মেয়ে মালিহা তাবাসুমের হঠাৎ মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। তাই জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্টের জন্য গত ২৬ আগস্ট মেয়ে ও তাঁর জন্য ছয় হাজার ৯০০ টাকা করে ফি ব্যাংকে জমা দেন।
এরপর স্লিপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট সরবরাহের কথা থাকলেও দুই মাস পরেও তা সরবরাহ করা হয়নি।
তিনি জানান, গত ১৮ অক্টোবর মেয়ে মালিহার পাসপোর্ট দেয়া হলেও সেখানে তাঁর মায়ের নামের অক্ষর ভুল রয়েছে। সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারেনি তিনি।
এদিকে, দিন যতই গড়াচ্ছে অসুস্থ মেয়ের শারীরিক অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করার পর থেকে নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে। জানিনা, আল্লাহ আমার এই অসুস্থ মেয়ের ভাগ্যে কি রেখেছেন?
শহরের কালীতলা মহল্লার বাসিন্দা জয় বলেন, সাধারণভাবে পাসপোর্ট নিতে গত তিন মাস আগে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছিলাম। আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় অফিসে পাঁচশ’ টাকা বাড়তি দিয়েছি।
রাণীনগর উপজেলার রাতোয়াল গ্রামের রাফিল মণ্ডল বলেন, গত মার্চ মাসে পাসপোর্ট করার সময় অফিসের এক দালালের খপ্পড়ে পরি। জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। আবেদন ফরমে লেখা ছিল সাধারণ। এরপরই শুরু হয় লকডাউন। কয়েকবার অফিসে ঘুরেও পাসপোর্ট হাতে পাইনি।
আবদুল হান্নানের বড় মেয়ে শাহানা হাবীবা মিম জানান, অফিসে আবেদন করার পর থেকে আমরা শুধু বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছি। প্রথমে মেশিন নষ্ট বলে কয়েকদিন ঘোরানো হয়। আবার, ছবি ওঠানোর পর অফিস থেকে যে স্লিপ দেওয়া হয়েছিল সেখানে মায়ের নামের বানান ভুল।
এ বিষয়ে কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে, অফিসে থেকে ভুল সংশোধন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু যখন ছোট বোনের পাসপোর্ট দেওয়া হয়, দেখা গেল ভুল সংশোধন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন এই বিষয়টি অফিসে জানায়; তারা বলেন, নতুন করে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে। আর আমার বাবার পাসপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। কাজ করা হচ্ছে বলে আমার পরিবারকে দিনের পর দিন ঘোরানো হয়েছে। ভুলতো অফিসের আমরা কেন নতুন করে আবার আবেদন করবো।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের আবেদন ফরম পূরণ করতে কত টাকা লেগেছিল এক কর্মকর্তার প্রশ্নে আমি বলেছিলাম ১০০ টাকা। তিনি তখন বলেন, তারা ফরম পূরণে যদি টাকা নেয় আমরা অফিসের লোক হয়ে টাকা নেব না কেন? এসময় পাসপোর্ট নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শওকত কামাল বলেন, আগস্ট মাসে ক্যামেরার একটু সমস্যা ছিল। ক্যামেরা ঠিক করার পর আবদুল হান্নানদের ফোন করে ডেকে ছবি ওঠানো হয়েছিল।
এছাড়া ভুল সংশোধন করার একটা সময় থাকে। ওই সময়ের মধ্যে শিশুর আবেদনটি সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। তবে শিশুর বাবা আবদুল হান্নানের আবেদনটি সংশোধন করায় পাসপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে। তবে তাদের হয়রানি বা হুমকি দেয়ার অভিযোগটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
তিনি আরও বলেন, যদি কেউ হয়রানির শিকার হন অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অফিসে কোনো ধরনের টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা জনসেবার জন্য বসে আছি।