রকিব হাসান নয়ন, জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের মাদারগঞ্জে নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাবিননামা তৈরীর অভিযোগে আদালতে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন বাদী। প্রতারক কাজীকে রক্ষা করতে প্রভাবশালী আসামীরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগসহ নানা ভাবে হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আসামীদের অব্যাহত হুমকীতে বাদী ও তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা কামনা করে মাদারগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা গ্রামের হাফিজুর রহমান তার কন্যা হিমি আক্তারকে পাশর্^বর্তী মেলান্দহ উপজেলার শাহজাতপুর গ্রামের মৃত সুজন মিয়ার পুত্র সৈকত হাসান আকাশের কাছে বিয়ে দেন। উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের ৬,৭,৮ও ৯ নং ওয়ার্ডের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) ফজলুর হক প্রমানিকের মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেন মোহর ধার্য করে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হয়। যার বহি নং ৮, পৃষ্ঠা নং ২১, তারিখ ০৮/১২/২০১৫। হাফিজুর তার মেয়ের বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ নগদ ৩ লাখ টাকা ও গয়নাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা মালামাল দেন। বিয়ের দুই বছর যেতে না যেতেই ফের যৌতুকের দাবিতে হিমির উপর নির্যাতন শুরু করে স্বামী আকাশ।
স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয় হিমিকে। নিরুপায় হয়ে হিমির বাবা হাফিজুর রহমান মাদারগঞ্জ থানায় নারী ও নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় মামলাটি বিচারের জন্য পুলিশ জামালপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বাদি ও স্বাক্ষীদের জবান বন্দি রেকর্ডের পর আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে এই যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা থেকে রেহাই পেতে আসামীরা কাজী জফলুর হককে অর্থের বিনিময়ে সহায়তায় পূর্বের কাবিননামা রেখেই কণে ও স্বাক্ষীদের টিপ স্বাক্ষর জাল করে ফের দেড় লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ভুয়া একটি কাবিননামা তৈরী করে । যার ক্রমিক নং ৪০/১৫, পৃষ্ঠা নং-৫৭, তারিখ ০৮/১২/২০১৫ । ভুয়া এই কাবিননামার খোঁজ পেয়ে হিমির বাবা হাফিজুর রহমান কাজীর কাছে বাড়িতে গেলে কাজী ও তার লোকজন তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। এছাড়া এই ঘটনায় আইনের আশ্রয় না নেয়ার জন্য হুমকী প্রদান করেন। অসহায় হাফিজুর রহমান কাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মাদারগঞ্জ আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক কাজীর এই জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি তদন্ত পূর্ব্বক আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা রেজিষ্ট্রারকে নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী হাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন- নারী নির্যাতন মামলার আসামী সৈকত হাসান আকাশসহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী এবং কাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় তদন্ত দেয়ায় আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মামলার বাদী হাফিজুর ও তার মেয়েকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে এবং বিভিন্ন ভাবে হুমকী দিয়ে আসছে। আসামীদের অব্যাহত হুমকীতে বাদী ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই ঘটনায় বাদি তার ও পরিবারের সদস্য নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহায়তা কামনা করে মাদারগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন মামলা বাদী হাফিজুর রহমান।
এদিকে কাবিননামা জালিয়াতির বিষয়ে নিকাহ রেজিষ্ট্রার (কাজী) কাজী ফজলুল হকের কাছে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন সুদোত্তর না দিয়ে জালিয়াতি ও হুমকির বিষয়টি এড়িয়ে যান।নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের জালিয়াতির বিষয়ে জামালপুর জেলা রেজিষ্ট্রার মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আদালতের নির্দেশ তিনি হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে তার অন্যত্র বদলীর আদেশ আসায় তদন্ত আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি যদি চলে যান পরবর্তী অফিসার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।