DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪
ঢাকাবুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে ০৬ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ

Astha Desk
ডিসেম্বর ২, ২০২৪ ১০:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজামুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের আত্রাই নদীর জয়ন্তীয়া ঘাটের একদিকে খানসামা উপজেলা অপরদিকে বীরগঞ্জ। দুই উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াতের জন্য ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জয়ন্তীয়া ঘাটে ৪৪ কোটি ১৬ লাখে টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। দরপত্র আহবান করলে নির্মাণ কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা কনস্ট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা। এরপর, দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৬ শতাংশ। বাকি কাজ রেখেই এক বছর আগে পালায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছন দুই উপজেলার মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদার ও এলজিইডি’র গাফিলতির কারণে সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে নির্মাণ কাজ শুরু করা এই সেতুর কাজ থমকে যাওয়ায় নদী পারাপারে জনগণের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়দের ভরসা কাঠের তৈরি সাঁকো, যাতে চলাচলে দিতে হয় টোল। ঝুঁকি নিয়ে পারাপারে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা নিত্যসঙ্গী। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই এলাকার কৃষি অর্থনীতি।আর বর্ষাকালে সবার ভরসা একটি নৌকা।

এলজিইডি দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় জানায়, ‘গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের মধুবনপুর ও খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের চেহেলগাজী এলাকায় আত্রাই নদীর জয়ন্তীয়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তীতে করোনা কালীন সময়ে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার অযুহাতে কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।পরে দুই মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিলো। এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ করে বাকী কাজ বন্ধ রাখে।

সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জয়ন্তীয়া ঘাট এলাকায় সেতুর সব পিলার স্থাপন হয়েছে। সেতুর পাঁচটি অংশের ৩ টি স্প্যান ঢালাই হয়েছে। বাকি পিলার শুধু নদীর উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহার হওয়া কিছু সামগ্রী, মালবাহী ট্রলি ও পাহারাদারদের রুম রয়েছে। এখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন কাজ শুরুর সময় থেকে নির্মাণ সামগ্রী দেখভালের দায়িত্বে থাকা ২ জন পাহারাদার।

বাঁশের সাকোয় টোল দিয়ে পারাপার হওয়া কয়েকজন বলেন, জনসাধারণ থেকে শুরু করে এই সাকো দিয়ে বাইসাইকেল, ভ্যানচালক ও ব্যাটারী চালিত চার্জার ভ্যান জেলা পরিষদের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া এই খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হয়। নদীর পশ্চিমে মধুবনপুর, সনকা বাছারগ্রাম, ভোগডোমা, রাজিবপুর, রঘুনাথপুর ও ধুনট গ্রাম। পূর্ব দিকে খানসামা উপজেলার মধুবনপুর, নেউলা, দুহুশুহ, কায়েমপুর, খামারপাড়া ও জোয়ার গ্রাম। উভয় পারের গ্রামে ৫০ হাজারের বেশি লোকের বসবাস করে।

মধুবনপুর এলাকার ভ্যানচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সেতু না হওয়ায় এই পথে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম হলেও জীবিকার তাগিদে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সেতু হলে চলাচলেও যেমন পরিবর্তন আসবে তেমনি আয়-উপার্জনও বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন :  হাসনাত-সারজিসকে ট্রাকচাপায় হত্যার চেষ্টা

রোগী নিয়ে জরুরি সময়ে বিপাকের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর সন্তুষ্ট ছিলাম যে কাজটা হলে উপকার হবে কিন্তু ৬ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। বরং ঠিকাদারের লোকজন পালিয়ে গেছে এতে কাজ বন্ধ থাকায় আমাদের ভোগান্তি লাঘবে কারো নজর নেই।

ক্ষোভ প্রকাশ করে কাঁচামাল ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, সেতুর অভাবে এই অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ হয়। এতে পণ্যের ন্যাযমূল্য পাওয়া থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। সেতুর কাজ শেষ হলে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। তাই দ্রুত সময়ে সেতুর কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাহারাদার আব্দুল বাকী বলেন, ২০১৮ সাল সেতুর কাজ শুরুর সময় থেকে পাহারার জন্য চুক্তিতে দায়িত্বে আছি। শুরু থেকেই কাজের ধীরগতি ছিল। গত এক বছর থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ। তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ৬ মাস থেকে তারাও মাসিক বেতন পায় না। ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফল আসেনি তবুও বকেয়া পাওয়ার আশায় এখনও ২ জন পাহারা দেন বলে জানিয়েছেন।

তবে এসব বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এই প্রতিনিধির সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের কেউ এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

খানসামা উপজেলার ৪নং খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, এই সেতুর অভাবে দুই অঞ্চলের মানুষকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে কৃষি পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ, রোগী ও জরুরী প্রয়োজনে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই দ্রুত সময়ে সেতুর কাজ শেষ করা প্রয়োজন।

দিনাজপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, জয়ন্তীয়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে ইতিপূর্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবুও কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে কয়েক মাস থেকে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। সেতু নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে সুরমা এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি হওয়া চিরিরবন্দর উপজেলায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি সেতু নির্মান চুক্তি বাতিল করে পুণঃদরপত্র আহবান করা হয়েছে।

এমকে/আস্থা

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০৩
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১০
  • ১১:৫১
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩২
  • ৬:২৪