জাদুকাটা থেকে উধাও অর্ধ কোটি টাকার বাল্কহেড, তহশীলদার বললেন “জিম্মায় ছিল!”
সিলেট সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের জাদুকাটা নদী এখন যেন অবৈধ খনিজ ব্যবসায়ীদের নিরাপদ ঘাঁটি! সরকারের কোনো ভ্যাট, ট্যাক্স বা অনুমতি ছাড়াই হাজার কোটি টাকার বালু-পাথর লোপাটে ব্যস্ত একাধিক শক্তিশালী চক্র। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগ নিয়ে দিনের আলোয় পাচার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, যার সর্বশেষ উদাহরণ—অর্ধ কোটি টাকার বাল্কহেড ‘চুরি’ হয়ে যাওয়া!
গত ২৫ মে বিকেল সাড়ে চারটায়, তাহিরপুর উপজেলার লাউরগড় এলাকায় স্থানীয়রা দেখতে পান—জাদুকাটা নদীর তীরে একটি ষ্টিল বডি বাল্কহেডে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ঘনফুট খনিজ বালি। তাৎক্ষণিকভাবে তারা খবর দেন উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে।
প্রশাসনের উপস্থিতির খবর পেয়ে বাল্কহেডটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায় চক্রটি। প্রায় ৪৫ লাখ টাকার বাল্কহেড ও ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার বালি পড়ে থাকে নদীতীরে। ইউএনও মো. আবুল হাসেম, পুলিশ, আনসার, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় জনতা উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধান চালালেও মালিক, মাঝি কিংবা শ্রমিকের খোঁজ মেলেনি।
এরপর বাল্কহেডটি ‘জিম্মায়’ নেওয়ার দায়িত্ব নেন তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) জহুর আহমেদ ও বাদাঘাট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফয়েজ আহমেদ ফজু।
কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় বিস্ময়কর তথ্য—বাল্কহেডটি আর নেই!
ইউপি সদস্য ফয়েজ আহমেদ জানান, “চক্রটি নিজেরাই বাল্কহেড চুরি করে সরিয়ে নিয়েছে। আমি তহশীলদারকে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে তহশীলদার জহুর আহমেদ বলেন, “বাল্কহেডটি তো ইউপি সদস্যের জিম্মায় ছিল। এখন কোথায় গেছে বলতে পারছি না, শুনেছি চুরি হয়ে গেছে।”
‘চুরি’ না ‘চক্রান্ত’?
স্থানীয়দের অভিযোগ, জাদুকাটা নদীর ইজারা শেষ হওয়ার পরও নদীর দুই তীর, খাস খতিয়ানভুক্ত ভূমি ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করে ডাম্পিং করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট বালি ও কয়েক লাখ ঘনফুট পাথর-বোল্ডার। এসব খনিজ সম্পদের বাজারমূল্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে— ভুল তথ্য দিয়ে কেউ কেউ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এসব খনিজ বালি-পাথরের মালিকানা দাবি করে রিট দায়েরের মাধ্যমে বিনা খরচে বালি-পাথর সরিয়ে নিতে মরিয়া হয়েছেন। ওই এলাকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এসব বালি-পাথর উত্তোলনের পর ‘প্রশাসন ম্যানেজ’ করার নামে অর্ধ কোটি টাকার চাঁদা তুলে নিজেরাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। এখন নানা অজুহাতে ঘাপটি মেরে বসে আছেন—সুযোগ পেলেই সড়ক ও নৌপথে এসব বালি-পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন।
এমকে/আস্থা/এইচএসএ