জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁয় আয়োজিত নজরুল সংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় মুক্তির মোড়ে অবস্থিত সংগীত নিকেতন-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতাটি গত ২৩ আগস্ট নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অনুষ্ঠানটির মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীদের নজরুল সংগীত পরিবেশনা এবং তাঁর সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রতিযোগিতায় ৩৯ জন বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয় এবং ৩ জন বিচারমন্ডলীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁর বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইঞ্জিনিয়ার চন্দন দেব, মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ, মোঃ রুবেল, সংগীত নিকেতন-এর সংগীত গুরু অখিল চন্দ্র সরকার, বিচারকমন্ডলী আশা বানু, জামিমুর রহমান, অন্ন রানী সাহা। তাঁদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে অতিথিরা নতুন প্রজন্মের সংগীত প্রতিভার প্রশংসা করেন এবং নজরুল সঙ্গীতের ঐতিহ্য ধরে রাখার গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “নজরুলের সংগীত আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নজরুলের সৃষ্টিকে ধরে রাখতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে পারি।” অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তাদের নজরুল সংগীতের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। শিশুদের সমবেত কণ্ঠে ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও বড়দের সমবেত কণ্ঠে ‘মধুকর মঞ্জীর’ এবং ‘চন্দ্র মল্লিকা’ পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়, যা দর্শকদের মন জয় করে নেয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে প্রবল উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। সন্তানের সাফল্যে অভিভাবকরা আনন্দিত হন এবং সংগীত নিকেতন-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, এ ধরনের প্রতিযোগিতা শিশুদের সংগীত শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের সৃজনশীল বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একজন প্রতিযোগী মেরিনা আক্তার (মেরী) বলেন, “আমি নজরুলের গান ভালোবাসি, তাঁর গানের মধ্যে যে সংগ্রামের কথা আছে, তা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অনেক কিছু শিখেছি এবং এই পরিবেশনা আমার জীবনের বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে।” অন্য একজন প্রতিযোগী, মায়িশা মাহিরা (মেধা) বলেন, “এই প্রতিযোগিতা ছিল আমার আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । আমি খুব আনন্দিত যে, এখানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি এবং নতুন নতুন সংগীত দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি।” একজন অভিভাবক সুমি সিংহ, “আমার সন্তানকে নজরুল সংগীতের প্রতি অনুরাগী করতে পেরে আমি খুব খুশি। এই ধরনের প্রতিযোগিতা তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং তাদের মননশীলতার বিকাশ ঘটায়।” সংগীত গুরু অখিল চন্দ্র সরকার বলেন, “আমরা সবসময় শিশুদের সঙ্গীত শিক্ষায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছি।
নজরুল সঙ্গীতের মতো শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা করলে তারা ভবিষ্যতে সফল সংগীতজ্ঞ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।” উল্লেখ্য, সংগীত নিকেতন নওগাঁ মুক্তির মোড় শাখা সহ অন্যান্য শাখায় স্থানীয়ভাবে সংগীত শিক্ষার প্রসারে দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যা এলাকার শিশু-কিশোরদের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। আজকের অনুষ্ঠানটি সেই ধারাবাহিকতায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে গণ্য হবে।