DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাসোমবার ১০ই মার্চ ২০২৫
ঢাকাসোমবার ১০ই মার্চ ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাবা-ছেলে প্রতিবন্ধী: সেহরিতে না খেয়ে, ইফতারে শুধু পানি

মোঃ এ কে নোমান, নওগাঁ:
মার্চ ১০, ২০২৫ ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ছলছল চোখে কথা বলছিলেন ৬০ বছরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন—“আমিও চোখে দেখি না, আমার ছেলেও দেখতে পায় না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে কয়টা টাকা পায়, সেটা দিয়ে সংসার চলে না। রমজানের কয়েকটা রোজা চলে গেল, সেহরিতে না খেয়ে থাকি, ইফতারে শুধু পানি দিয়ে রোজা ভাঙতে হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার যে টাকা পাই, তা দিয়ে চাল কিনব, তরকারি কিনব, কাপড় কিনব, না কি ওষুধ কিনব?”

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা মোজ্জাফর হোসেন ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। সংসার চালাতে তিনি দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় গান গেয়ে উপার্জন করতেন। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ের পর তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। এখন তারা বাবা-মায়ের কোনো খোঁজও নেয় না। ছোট ছেলে মারুফ দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় সড়কে একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়ির ধাক্কায় দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারায়।

দৃষ্টিহীন মোজ্জাফর হোসেনের জীবন এক সময় খুব কষ্টের ছিল, তবে এতটা দুর্বিষহ নয়। ছোটবেলায় দৃষ্টিশক্তি হারালেও জীবনযুদ্ধে হাল ছাড়েননি তিনি। দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পথেঘাটে গান গেয়ে উপার্জন করতেন। বড় দুই ছেলে বিয়ের পর দূরে সরে গেলেও ছোট ছেলে মারুফ তখনো পাশে ছিল। কিন্তু বিধিবাম, ২০১৯ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারুফ তার দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারায়। এরপর থেকেই দুর্বিষহ এক অন্ধকার জীবনের যাত্রী হন বাবা-ছেলে।

মোজ্জাফর হোসেন বলেন, “আগে রাস্তায় গান গেয়ে যা পেতাম, তা দিয়ে সংসার চলত। কিন্তু এখন শরীরও চলে না, আয়ও হয় না। বড় দুই ছেলে চলে গেছে, ছোটটাও আমার মতো অন্ধ হয়ে গেছে। স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও সেই সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। প্রতিবন্ধী ভাতার যে টাকা পাই, তা দিয়ে খাবার কিনতে পারি না, চিকিৎসা তো অনেক দূরের কথা।”

তিনি আরো বলেন, “রমজান মাস চলছে, কিন্তু ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার করতে পারছি না। কোনো কোনো দিন শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখতে হয়। আল্লাহ যদি কারও মন নরম করেন, তাহলে হয়তো আমাদের কষ্ট কমবে।”

মারুফ বলেন, “এক সময় নিজের চোখে পৃথিবী দেখেছি, স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াব। কিন্তু দুর্ঘটনা সব কেড়ে নিলো। ডাক্তার বলেছেন, অপারেশন করলে দেখতে পারব। কিন্তু যেখানে এক বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটে না, সেখানে চিকিৎসার টাকা পাবো কই?”

আরো পড়ুন :  রংপুরে গ্রেফতার হওয়া আওয়ামীলীগের সাবেক এমপির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

মারুফ আরও বলেন, “আমার বাবা সবসময় আমাদের কষ্ট করে বড় করেছেন। তিনি ছিলেন সংসারের একমাত্র আশার বাতিঘর। আজ তিনি নিজেও নিরুপায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা হতো, তাহলে হয়তো নতুন করে জীবন শুরু করতে পারতাম।”

চোখের অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছেন না মারুফ। স্থানীয় হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকরা জানান, উন্নত চিকিৎসা করালে মারুফ আবার দেখতে পাবে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন প্রায় দুই লাখ টাকা, যা এই পরিবারটির জন্য অকল্পনীয়। প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে যে সামান্য অর্থ পান, তা দিয়ে খাবারই ঠিকমতো জোটে না, সেখানে চিকিৎসার খরচের চিন্তা করা যেন এক বিলাসিতা।

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জনি বলেন, “আমরা এলাকাবাসী চেষ্টা করি কিছু সাহায্য দিতে। কিন্তু সমাজের বিত্তবানরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান, তাহলে পরিবারটির কষ্ট লাঘব হবে। মারুফের চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।”

তিনি আরও বলেন, “এলাকায় অনেক ধনী মানুষ আছেন, যারা একটু সহযোগিতা করলে এই পরিবারটির দুর্দশা লাঘব হতে পারে। বিশেষ করে রমজানের এই পবিত্র মাসে যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে এটি হবে একটি বড় মানবিক কাজ।”

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, “তারা যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পান, তাহলে তা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দরখাস্ত করলে চিকিৎসার জন্যও সহযোগিতার সুযোগ দেখা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার সুযোগ রয়েছে। যদি তাদের পরিবার থেকে আবেদন করা হয়, তবে আমরা সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করব।”

মোজ্জাফর হোসেন ও তার ছেলে মারুফ এক কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সাহায্য ছাড়া তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উচিত এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো। তাদের একটি ছোট সহযোগিতাই হয়তো মারুফের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে এবং এই অসহায় পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। আসুন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াই।

যারা সাহায্য করতে চান, তারা সরাসরি মোজ্জাফর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন বা স্থানীয় সমাজসেবা দপ্তরের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারেন। তাদের জন্য আমাদের সকলের একটুখানি সাহায্যই হতে পারে আলোর দিশা।

এমকে/আস্থা

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৫৬
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:০৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০১
  • ১২:১৩
  • ৪:২৫
  • ৬:০৯
  • ৭:২২
  • ৬:১২