মো: আব্দুস সামাদ – চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি :
সম্পদ-সম্পত্তিতে সমৃদ্ধ পরিবারের সন্তান। প্রচণ্ড প্রত্যয়ী ও দূরদর্শী। অভাবনীয় বিনয়ী দিলীপ কুমারকে কাছে থেকে না দেখলে কতটা মানবদরদি; তা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। অনন্ত সম্ভাবনার শিল্প হলো রাজনীতি। যুগ যুগ ধরে যা প্রমাণিত তা চর্চায় যখন কোনো দরদি এগিয়ে আসে, তখন হিংসা বিদ্বেষ, নিন্দুকের ছড়ানো মনগড়া বানোয়াট কল্পকাহিনিতে মর্যাদাহানির হীন চেষ্টাও থাকে। এতে কান দিলে অগ্রযাত্রার উৎসাহে ভাটা পড়ে। দিলীপ কুমার তা জানে বলেই অন্যের অপকর্ম চর্চায় সময় নষ্ট না করে নিজের চরকায় তেল দেওয়ার তথা নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়ে থাকেন। এ তাগিদ দিন দিন তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শীর্ষে। মানবকল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার প্রত্যয়ে নেমেছেন মাঠে।
চুয়াডাঙ্গারই এক সময় দানবীর নামে খ্যাত এমএম জোহার সহপাঠী গ্রেট ব্রিটেন থেকে এমবিএ করা গুণী পিতা অমিয় কুমারের ৩ পুত্রের মধ্যে দিলীপ কুমার সবার বড়। পৈত্রিক ভিটে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের পুরাতন গলি। এ গলিতে ১৯৩৪ সালে কমলা ক্লথ স্টোর নামে যে প্রতিষ্ঠান ছিল তা দিলীপের দাদা দোয়ারকা দাস আগরওয়ালার। কুষ্টিয়ার হরিণারায়নপুরে যার নামে রয়েছে মহাবিদ্যালয়সহ বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠান। দিলীপের অপর দুই সহোদরের মধ্যে একজন আমেরিকায় স্বনামধন্য চিকিৎসক, অপরজন ব্যবসায়ী। দিলীপ কুমারকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হওয়ায় বুঝেছি, মানুষ কতটা মানবিক হতে পারে। কতটা মানবিক হওয়া সম্ভব। সব সময়ই মানবদরদি। মানব সেবাই ওর কাছে বড় ধর্ম। কেমন? তার একটা ছোট উদাহরণ হলো- ঠাকুরদাদার প্রতিষ্ঠা করা রূপছায়া সিনেমা হলের নিকটস্থ কাঠপট্টিতে যখন ছিল ‘স’ মিল তখন কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ব্যবসায়েও নিচ্ছিলো হাতে খড়ি। ওই ‘স’ মিলে প্রতি মাসে জমা কাঠেরগুড়ো একবারে কিনে নিয়ে খুচরা ক্রেতাদের মাঝে বিক্রি করে মাসে বেশ ভালোই লাভ হতো। লাভের টাকা ইচ্ছেমতো খরচের এখতিয়ার থাকলেও কোনো দিনই তা করতে দেখিনি পাশে থাকা আমরা। লাভের যৎসামান্য টাকা গচ্ছিত রেখে চুয়াডাঙ্গায় যত বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার হতো, ময়নাতদন্ত শেষে তা দাফনের ব্যয় মেটাতো দিলীপ কুমার। এ কাজে এগিয়ে আসা মানুষ ওই সময় ছিল বিরল। এটা কতটা সামাজিক দায়বদ্ধতা তা এখন হয়তো অনেকেই বুঝবেন না। কারণ পরবর্তীতে কেউ কেউ এগিয়েছেন।
শুধু কী বেওয়ারিশ লাশ দাফন-সৎকার? কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার পাশে দাঁড়িয়ে অসহায় পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোও যেনো ওর অস্থিমজ্জায় মিশে থাকা ভালো অভ্যাস। ছাত্রজীবনে উপার্জিত যার অর্থ বেওয়ারিস লাশ দাফনে ব্যয় হতো, সেই দিলীপ কুমার যখন চুয়াডাঙ্গায় আর ১০ জন ঠিকাদারের মতোই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ঠিকাদারি শুরু করে। ডিটি কনস্ট্রাকশন নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখনও শুধু অনন্য উদাহরণই হয়ে নেই, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনে আন্তরিক প্রচষ্টা থাকলে যে অনেক কিছু করা সম্ভব তা দিলীপ নিজ হাতে করে দেখিয়েছে। ঠিকাদারির পাশাপাশি আরও বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্নে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনের পর দিন ছুটতে হয়েছে। পরিশ্রম তার সৌভাগ্যের চাবিকাঠি হয়ে ধরা দিয়েছে। বেশ ক’জনের অংশীদারিতে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড নামক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেই দেশজুড়ে আলোড়িত হয়। নামকরণের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিচক্ষণতা আর সততায় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটেছে প্রত্যাশিত গতিতেই। দেড়-দু’যুগে সারাদেশে ৩০টির মত শাখার উদ্বোধন করা সম্ভব হয়েছে। ব্যবসায় যেমন ঘটেছে প্রসার, তেমনই দিলীপ কুমার মানবতার সেবাই নিজেকে নিবেদিত রেখেছে। বাড়িয়েছে মানব সেবার পরিধি। মা তারাদেবীর নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুয়াডাঙ্গাসহ বেশকিছু এলাকার মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ নিখরচায় প্রসূতি রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে পেঁৗঁছে দেওয়ার জন্য দিন রাত ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে তার অবদান অনস্বীকার্য। বিশুদ্ধ বন্ধুত্বে অনন্য উদাহরণ। অবাক হলেও সত্য, কয়েক শত মেধাবী শিক্ষার্থীকে উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে চলেছে নীরবে। এসব প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় আনেননি কখনই। প্রচারও হবে না হয়তো কোনোদিন।
হঠাৎ করে নয়, ভালকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকরা তথা হীনমানসিকতা লালনকারী যুগে যুগে এসেছে। তাদের অনেকেই ইতিহাসের আস্তাকুড়েতে নিক্ষিপ্ত হলেও বর্তমানের পরস্পর্শকাতর কেউ কেউ নিন্দার দূষিত বাতাসে নিজেকেই অতিষ্ঠ করে তুলেও বুঝতে পারে না। এ শ্রেণির মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে দিলীপ কুমার ঘনিষ্ঠদের দৃঢ় আশাবাদ। মানুষ দিলীপ কুমারের পাশে আছেন। থাকবেন। আমরা দোয়া চাই, চাই আশীর্বাদ সকলের। দিলীপ কুমারের দীপ্ত এগিয়ে চলা হোক মানবসেবার দৃষ্টান্ত স্থাপনের দ্বার উন্মোচন। গড়ে উঠুক চমৎকার চুয়াডাঙ্গা।